চিকিৎসাবিজ্ঞানের সব শর্ত মেনেই হোক আর না মেনেই হোক, বাস্তবতা হলো, করোনাভাইরাসের টিকা সবার আগে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে রাশিয়া। চীনেও একটি টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে ‘সাধারণ’ মানুষের ওপর। অন্যদিকে টিকা নিয়ে জমে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি। আগামী মাসেই টিকা বাজারে আনার ধুয়া তুলে আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ টিকা উদ্ভাবনের দৌড়ে নেই। এসব দেশ চেষ্টা করছে, যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্য দেশ থেকে টিকা সংগ্রহ করা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ১৯০টির বেশি করোনা টিকার প্রকল্প চালু রয়েছে। এর মধ্যে ১৪২টি টিকা এখনো প্রি-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে আছে অর্থাৎ মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়নি। ক্লিনিক্যাল (মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ) পর্যায়ে আছে ৫৬টি। এর মধ্যে প্রথম ধাপে আছে ২৯টি। ১৮টি টিকা আছে দ্বিতীয় ধাপে আর তৃতীয় ধাপে আছে ৯টি। একটি টিকা চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে রাশিয়ায়। সেটির নাম ‘স্পুিনক ভি’। ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে রাশিয়ার ‘গ্যামেলেই ইনস্টিটিউট অব ইপিডেমিয়োলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
গত সোমবার রাতে রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের টিকার প্রথম ব্যাচ জনসাধারণের মধ্যে বিতরণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। শুরু হয়ে গেছে দ্বিতীয় ব্যাচের উৎপাদনও। মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেছেন, কয়েক মাসের মধ্যেই মস্কোর বেশির ভাগ বাসিন্দা করোনার টিকা পাবে। রাশিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁদের টিকা নিলে অন্তত দুই বছর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে ‘স্পুিনক ভি’ উৎপাদন করতে পারে রাশিয়া। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও সৌদি বাদশাহ সালমানের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
চীনের কম্পানি সিনোভ্যাক বায়োটেক জানিয়েছে, তাদের উদ্ভাবিত টিকা এরই মধ্যে কম্পানির কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। কম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁদের ৯০ শতাংশ কর্মী ও স্বজনের শরীরে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়েছে।
সিনোভ্যাকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টিকা উৎপাদনের জন্য এরই মধ্যে তাঁদের কারখানা নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে প্রতিবছর ৩০ কোটি টিকা উৎপাদন করা যাবে।
এদিকে গত সোমবার সিনোভ্যাক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের টিকার এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তবে এই টিকা বয়স্কদের শরীরে অপেক্ষাকৃত কম কাজ করে।
চীনের আরো দুটি প্রতিষ্ঠান টিকা উৎপাদনের অনুমোদন পেয়েছে। একটি হলো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ‘সিনোফার্ম’, আরেকটি ‘বায়োলজিকস’। দুটি টিকাই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে রয়েছে।
টিকা বাজারে ছাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের বিরুদ্ধে শুরু থেকে তাড়াহুড়ার অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রই এখন ‘তাড়াহুড়ার’ পথ বেছে নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আগামী মাসের মধ্যেই করোনার টিকা বাজারে মিলবে। বিরোধীরা বলছেন, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব ফেলতেই ট্রাম্প তাড়াহুড়া করে বাজারে টিকা আনতে চাইছেন। সূত্র : রয়টার্স, গার্ডিয়ান।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।