সোমবার সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সেই তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদের আশপাশের মাটি খোঁড়া শুরু করেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের অর্ধ-শতাধিক শ্রমিক। উদ্দেশ্য- মাটির নিচে গ্যাসের লাইনে কোনো লিকেজ আছে কি না- তা জানা। এদিন সন্ধ্যা নাগাদ শ্রমিকরা দুটি লিকেজের সন্ধান পেয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিতাসের কর্মকর্তারা।
স্থানীয় লোকজন ও মাটি খনন কাজে অংশ নেওয়া শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় মসজিদের উত্তর পাশে মাটি খুঁড়ে তিতাস গ্যাস সরবরাহ পাইপের সন্ধান পান শ্রমিকরা। পরে শ্রমিকরা সেই পাইপ ভালোভাবে পরীক্ষা করেন। এ সময় পর পর দুটি লিকেজ দেখতে পান তারা। এর আগে সকাল ৯টা থেকে মসজিদের আশপাশের বেশ কয়েকটি জায়গায় মাটি খোঁড়া শুরু হয়।
শ্রমিকরা জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে ৬-৭ ফুট গভীর গর্ত করা হয়। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে পাইপের সন্ধান পাওয়া যায়। এর পর সেই পাইপ পরীক্ষা করে তাতে পর পর দুটি লিকেজ দেখা যায়। তবে সামনের দিকের পাইপ এখনো পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে শ্রমিকরা লিকেজ খুঁজে পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত তিতাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানিটির উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মফিজুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, মসজিদের উত্তর পাশে পাইপের খোঁজ পাওয়া গেছে ঠিকই। কিন্তু পুরো পাইপটি এখনো বের হয়নি। লিকেজ অনুসন্ধানের নিমিত্তে মাটি খোঁড়ার কাজ এখনো চলমান আছে। পুরো কাজ শেষ হতে সারা রাতও লেগে যেতে পারে।
পাইপের যে অংশের সন্ধান মিলেছে তাতে লিকেজ আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা এখনই নিশ্চিত করা বলা যাচ্ছে না। কারণ ওই এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ এখন বন্ধ আছে। লিকেজ আছে কি না- সেটা জানতে আগামীকাল (মঙ্গলবার) গ্যাস সরবরাহ করে আমরা পরীক্ষা করব। তার পরই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, বিস্ফোরণের ঘটনায় ঘুরে ফিরে গ্যাসের লাইনে লিকেজের কথাই উঠে এসেছে। যদিও প্রাথমিকভাবে মসজিদের ছয়টি এসি বিস্ফোরণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, একটি এসিতেও বিস্ফোরণ ঘটেনি। বরং বিস্ফোরণে এসির বাইরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর পর থেকেই বলা হয়, তিতাসের গ্যাসের লাইনে লিকেজ থাকায় তা থেকে গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক স্পার্কের মাধ্যমে বিস্ফোরণ হয়েছে। এমনকি ফায়ার সার্ভিস এবং সিআইডির প্রাথমিক তদন্তেও সে রকমই আভাস দেওয়া হয়। মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের অভিযোগ, মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য গ্যাস লাইনের লিকেজ মেরামত করা হয়নি। কয়েক দিন আগেও বিষয়টি তিতাস কর্তৃপক্ষকে ঠিক করার কথা বলা হয়।
এমনই প্রেক্ষাপটে ঘটনা তদন্তে তিতাসের গঠিত তদন্ত কমিটি সোমবার গ্যাসের পাইপ লাইনের সেই লিকেজের সন্ধানে নামে। এর আগে রোববারও মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু করার কথা ছিল, কিন্তু পরে তা শুরু করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে সোমবার সকালে বিষয়টি নিয়ে তিতাসের নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মফিজুল ইসলাম বলেন, অর্ধশতাধিক শ্রমিক মাটি খোঁড়ার কাজ করছেন। আমরা তিতাসের মূল পাইপলাইনগুলো বের করার চেষ্টা করছি। মূল পাইপলাইন পাওয়া গেলে দেখা যাবে যে, সেখান থেকে কোনো শাখা লাইন গেছে কি না। তাছাড়া পুরোনো কোনো পাইপলাইন মসজিদের নিচে আছে কি না- সেটাও দেখা হচ্ছে।
এদিকে, শুক্রবার মসজিদে বিস্ফোরণের পর থেকেই ওই এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন পশ্চিম তল্লা ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। গত কয়েক দিন ধরে ওই এলাকার বাসিন্দাদের অনেককেই লাকড়ি দিয়ে রান্না করতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই মসজিদের ভেতরে হঠাৎ করেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তখন এশার নামাজের জামাত মাত্র শেষ হয়েছে। এতে নামাজ পড়তে আসা অন্তত ৪০ জন মুসল্লি দগ্ধ হন। পরে গুরুতর আহত ৩৭ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৭ জন। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন বাকিরা।
ঘটনা তদন্তে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, জেলা প্রশাসন, ডিপিডিসি এবং সিটি করপোরেশনের পক্ষ আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।