এক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে ইভ টিজিং ও হট্টগোলের প্রতিবাদ করেছিলেন সৈয়দ আলিফ রোহান (২০)। তিনি খুলনার ফুলতলা উপজেলার এম এম কলেজের অনার্স (সমাজকর্ম) প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সে প্রতিবাদের জন্যই জীবন দিতে হয়েছে তাকে। প্রতিবাদ করার কারণে রোহানকে শায়েস্তা করতে শান্ত গাজী, তাছিন মোড়ল, সাব্বির ফারাজীরা মিলে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
তিনি বলেন, আলিফ রোহান খুলনার ফুলতলা পায়গ্রাম কসবার সৈয়দ আবু তাহেরের ছেলে। ৩১ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টায় কলেজের উত্তর পাশের গেটসংলগ্ন কলেজ মাঠে কয়েক শিক্ষার্থীর হাতে নিহত হন। ওই ঘটনার পরদিন রোহানের বাবা বাদী হয়ে তাছিন মোড়ল (২২), সাব্বির ফারাজী (২৩)সহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও চার-পাঁচ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফুলতলা থানায় মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রোহান হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারসহ বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী ৩ এপ্রিল এম এম কলেজের সামনে খুলনা-যশোর মহাসড়কের পাশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
মুক্তা ধর বলেন, হত্যার ঘটনাটি রাজনৈতিক কোন্দল, কলেজের আধিপত্য বিস্তার, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ নাকি প্রেমঘটিত বিরোধের জেরে তা খতিয়ে দেখতে সিআইডির এলআইসি শাখা তদন্ত শুরু করে। ভিকটিমের পরিবার, ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে রি-ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র তাছিন মোড়ল, সাব্বির ফারাজীসহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এলআইসির একটি চৌকস দল তাদের গ্রেফতারের জন্য সম্ভাব্য সব স্থানে অভিযান চালিয়ে ঢাকার আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকা থেকে তাছিন মোড়ল ও সাব্বির ফারাজীকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোহানের বাড়ির পাশে ফুলতলার পায়গ্রাম কসবার রহমানিয়া এলিমেন্টারি স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে বিভিন্ন মেয়েকে উত্ত্যক্ত করাসহ হট্টগোল করতে থাকেন তাছিন-সাব্বিররা। রোহান এলাকার অন্য ছেলেদের নিয়ে তার প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন তাছিন, সাব্বির ও শান্ত গাজীরা। তারা সুযোগ বুঝে আলিফ রোহানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। ৩১ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এম এম কলেজ মাঠে একা পেয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে রোহানের বুকের ডান পাশে আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। এটা ছিল পরিকল্পিত। কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী অন্য সদস্যরাও বিভিন্নভাবে তাকে আঘাত করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় কলেজের শিক্ষার্থীরা তাকে সিএনজিতে করে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।