প্রকান্ড অট্টালিকা। একতুলা, দোতলা, তেতুলা, কত যে কামক্স ভাহা বলিতে। পারি না। দেখিতে দেখিতে আমরা বৃহৎ একখানি ঘরে গিয়া উপস্থিত হইলাম। মেঝেতে নিবিড় ধূলা পড়িয়াছিল। কোথাও কিছু নাই, হঠাৎ দেখিলাম আমার ঠিক সম্মুখে একটি পায়ে দাগ পড়িল। শিশুর পদচিহ্ন। জাহার আগে, কি আশেপাশে আর দাগ নাই। কেবল সেই একটি দাগ মাত্র। অগ্রসর হইয়া সেই পদচিহের উপর আমার নিজের পা রাখিলাম।।
অমনি ঠিক সেই সময় আমার সম্মুখে আর একটি পায়ের দাগ পড়িল। আমি আমার সঙ্গী ভূতের গা টিপিলাম। সেও আমার গা টিপিল। এইরূপে যতই যহি, আগে ধুলার উপর ততই একটি শিশুর পদচিহ্ন অঙ্কিত হইতে থাকে। কেবল এক পায়ের চিহ্ন; দুই পায়ের দাগ পড়ে না। যখন ঘরের অপর প্রান্তে প্রাচীরের নিকট গিয়া উপস্থিত হইলাম তখন আর দাগ পড়িল না। | সেঘর হইতে বাহির হইয়া আমরা অন্যান্য ঘর পরিদর্শন করিতে লাগিলাম। ক্রমে একখানি বড় ঘরে গিয়া বসিলাম। দুখন বৃত্রি হইয়াছিল। ভূত বাতি জ্বালাইয়া আমার সম্মুখে টেবিলের উপর রাখিল। সহসা ঘরের অন্য দিক হইতে একখানি চৌকি যেন হাওয়ায় ভাসিতে ভাসিতে ঠিক আমার সম্মুখে আসিল। আমি বলিয়া উঠিলাম, বাঃ। একি।
ক্রমে দেখিলাম, সেই চৌকির উপর যেন কি বসিয়া রহিয়াছে। মানবের আকৃতি বটে। কিন্তু তাহা দেহ যেন অতি দুর ধুম দ্বারা গঠিত। তখন সেই ঘর পরিত্যাগ করিয়া আমরা দ্বিতলে গিয়া উঠিলাম। আমার শয়নঘর এই ভলায় নির্দিষ্ট হইয়াছিল। কিন্তু তখনও নিদ্রা যাইবার সময় হয় নাই। সুতরাং এই তলায় অন্যান্য ঘর পরিদর্শন করিতে লাগিলাম। একটি ক্ষুদ্র কামরার নিকট গিয়া উপস্থিত হইয়া আমার সঙ্গ ত্য বলিল – এ কি হইল? এ ঘরের দরজা বন্ধ কেন? আমি এইমাত্র চাৰি খুলিয়া কপাট উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছি।
| বিস্ময়ে ঘরের দিকে চাহিয়া আছি এমন সময়ে কি আশ্চর্য, দ্বার আস্তে আস্তে আপনি পিয়া গেল। আমরা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিলাম। এক প্রকার অমানুষিক গন্ধে ঘর রুমে পরিপুরিত হইতে লাগিল। এক প্রকার ভৌতিক ত্রাসে হৃদয় অবসর হইতে লাগিল। আশঙ্কা যে কি তাহা বর্ণনা করিতে পারি না। নব জীবনের প্রতিকুল কোন একটা ভীষণ পদার্থ যেন সেই ঘরে আছে, এইরূপ আমাদের মনে হইল। সর্বনাশ। সহসা ঘরের দ্বার বন্ধ হইয়া গেল।
সে ঘরে আর অপর দ্বার কি জানালা ছিল না। প্রথমে দুইজনে দ্বার টানাটানি করিয়া দেখিলাম, কিছুতেই খুলিতে পারিলাম না। আমার সঙ্গ বলিল, অতি পাতলা তক্তা দিয়া কপট জোড়াটি গঠিত। দুই লাথিতে ভাঙিয়া ফেলি। দেখি ভূতে কি করিয়া রক্ষা করে।
দুই লাথি নয়, হাজার লাখিতেও সে কপাট ভাঙিল না। আমি অনেক চেষ্টা করিলাম। কিন্তু কিছুতেই সে খবৰ কপট ভক্তিতে পারিলাম না। শান্ত হইয়া ‘আমরা নিবৃত্ত হইলাম। তখন খলখল করিয়া বিকট হাসির শব্দ হইল। আরটি আতে আন্তে আপনি খুলিয়া গেল। সেই ভয়াবহ ঘর হইতে তাড়াতাড়ি বাহির হইলাম।
সেই ঘর হইতে বাহির হইয়া আমরা বারান্দায় দাঁড়াইলাম। এক পার্গে মিটমিট করিয়া কেমন একটি নীলবর্ণের অলৌকিক আলাে জ্বলিতেছিল। কি আলাে, কোথায় যাইতেছে দেখিবার নিমিত্ত আমরা তাহার পশ্চাদগামী হইলাম। সিড়ি দিয়া আমাদের আগে আগে আলােটি তেতলায় উঠিতে লাগিল। তেতলার উপরে উঠিয়া একটি সাধারণ শয়নাগারে প্রবেশ করিলাম। যে বৃদ্ধা এই ব্যক্তিতে একাকী বসবাস করিত, এই ঘরটি তাহার ছিল, আমরা এইরূপ অনুমান করিলাম। ঘরের ভিতর একটি সেরাজ ছিল। খুলিয়া দেখিলাম, তাহার ভিতর একনি রেশমের কমাল ও দুইখানি চিঠি রহিয়াছে। দ্বিতলে আসির নিমিত্ত সিঁড়ি দিয়া নামিতে লাগিলাম।
মনে হইল, আমার পাশে পাশে চিঠি দুইখানি কাড়িয়া লইবার নিমিত্ত কে যেন বারবার চেষ্টা করিতেছে। দৃঢ় মুষ্টিবদ্ধ কবিয়া আমি তাহার সে চেষ্টা বিফল |
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।