প্রথম ম্যাচে দাপটের সাথে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই তুলনায় দ্বিতীয় ম্যাচটি হলো যাচ্ছে তাই। বাজে ব্যাটিং, বোলিং ও লাগামছাড়া ফিল্ডিংয়ে হজম করতে হলো বাজে হার। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ও শেষ টি টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে আফগানরা। দুই মাচ সিরিজে সমতা ১-১। ট্রফি হলো ভাগাভাগি।
আগে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে মাত্র ১১৫ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে জাজাই ও গনির ব্যাটে ১৪ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় আফগানিস্তান। ৪৫ বলে ৫৯ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন জাজাই। অথচ তিনি আউট হতে পারতেন ম্যাচের শুরুতে। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের হাত থেকে এদিন পড়েছে কম পক্ষে তিন থেকে চারটি ক্যাচ। তার মাসুল ভালোমতো দিতে হলো স্বাগতিকদের।
সহজ জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই আউট হতে পারতেন আফগান হজরত উল্লাজ জাজাই। নাসুমের বলে আকাশে বল তুলে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি বোলার নাসুম আহমেদ। হতাশা বাড়ে বাংলাদেশ শিবিরে।
দ্বিতীয় ওভারেই অবশ্য আফগানদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান। এক বল আগেই রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া রহমানউল্লাহ গুরবাজ দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহর হাতে। দলীয় চার রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। ৫ বলে তিন রান করে ফেরেন গুরবাজ।
এরপর উসমান গনিকে সাথে নিয়ে আগাতে থাকেন জীবন পাওয়া জাজাই। নাসুমকে কয়েকটি চার ছক্কা হাকিয়ে রিভিউ নিয়ে বেচে যান একবার গনিও। এই জুটিই আফগানদের ভিত্তি গড়ে দেয় সহজ জয়ের।
এই মাঝে মেহেদীর ১২তম ওভারের পঞ্চম বলে ক্যাচ দিয়েও বেচে যান উসমান গনি। তার ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি আফিফ হোসেন। ১৪তম ওভারে আবার মেহেদী। আবার ক্যাচ দেন উসমান গনি। স্কয়ার লেগে এবার সেই ক্যাচ নিতে পারেননি মোহাম্মদ নাঈম। তিনবার জীবন পেয়ে গনি আগাতে থাকেন বেশ ভালো মতো।
১৫তম ওভারে সাকিবকে দুই ছক্কা হাকিয়ে ম্যাচ অনেকটাই নিজেদের মুঠোয় নিয়ে আফগানিস্তান। পরের ওভারে বিধ্বংসী এই জুটি ভাঙেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন উসমান গনি। যাওয়ার আগে তিনি করে যান ৪৮ বলে ৪৭ রানের ইনিংস।
গনির বিদায়ের আগে ৩৭ বলে জাজাই পূর্ণ করেন তার ফিফটি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি গনির চতুর্থ ফিফটি। জয়ের জন্য বাকি কাজটুকু জাজাই সারেন দারিস রাসুলকে সাথে নিয়ে। ৪৫ বলে ৫ ছক্কা ও ৩ চারে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন হজরতউল্লাহ জাজাই। ৮ বলে ৯ রানে অপরাজিত থাকেন রাসুল।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট সম্বল মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদীর। নাসুম, সাকিব, মোস্তাফিজরা থেকেছেন উইকেটশূন্য।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ওপেনিং জুটি ভালো করেনি বাংলাদেশের। দলীয় সাত রানের মাথায় বিদায় নেন মুনিম শাহরিয়ার। মোহাম্মদ নবীর বলে আশরাফের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ১০ বলে তার রান মাত্র ৪।
দলীয় ২২ রানে আউট লিটন কুমার দাস। আগের ম্যাচে ফিফটি করা লিটন এবার ১০ বলে করেন ১৩ রান। ওমারজাইর বলে তিনিও ক্যাচ দেন আশরাফের হাতে।
আগের ম্যাচের মতোই ব্যর্থ নাঈমও। ১৯ বলে টেস্ট মেজাজে তিনি করেন মাত্র ১৩ রান। ২ চার। এরপর হয়ে যান রান আউট। পারেননি সাকিবও। ১৫ বলে ৯ রান করে তিনি ওমারজাইয়ের শিকার।
দলের এমন বাজে মুহূর্তে হাল ধরার চেষ্টা করেন শততম ম্যাচ খেলতে নামা মুশফিকুর রহিম ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এ জুটিতে আসে সর্বোচ্চ ৪৩ রান। ৩১ বলে।
দলীয় ৮৮ রানে মাহমুদউল্লাহকে এলবির ফাদে ফেলে এই জুটি ভাঙেন আফগান স্পিনার রশিদ খান। ১৪ বলে ৩ চারে ২১ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। জুটি বড় হতে পারত মুশফিকের সাথে আফিফের। কিন্তু হয়নি। শততম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ইনিংস সর্বোচ্চ ৩০ রান করে ফেরেন তিনি। ২৫ বলের ইনিংসে তিনি হাঁকান ৪টি চার। ফারুকির বলে ক্যাচ দেন আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবীর হাতে।
এরপর দ্রুত গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৯ বলে ৭ রান করে ওমারজাইর শিকার হয়ে হতাশ করেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। গোল্ডেন ডাক মারেন মেহেদী হাসান। ফজলহক ফারুকির বলে তিনি হন বোল্ড। ১৯তম ওভারে ফারুকির বলে বোল্ড হন পেসার শরিফুল ইসলাম। ৩ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
৯ বলে ৫ রানে নাসুম আহমেদ ও ৫ বলে ৬ রানে মোস্তাফিজুর রহমান থাকেন অপরাজিত। বল হাতে ৪ ওভারে ১৮ রানে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন ফজলহক ফারুকি। ৪ ওভারে ২২ রানে ৩ উইকেট নেন আজমতউল্লাহ ওমারজাই। মোহাম্মদ নবী ও রশিদ খান একটি করে উইকেট লাভ করেন।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।