সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ক্ষতি হলে দেশের মানুষ রেহাই দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার যদি সুচিকিৎসা না হয়, যদি তার কোনও ক্ষতি হয়, তাহলে এই দেশের মানুষ কোনও দিনই আপনাদের রেহাই দেবে না। দায় সব আপনাদের, সেই দায় আপনাদের বহন করতে হবে।’
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবিতে’ এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান।
খালেদা জিয়া ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনও তিনি সংগ্রাম করছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে এখনও সংগ্রাম করছেন তিনি। একদিনের জন্যও তিনি অবসর নেননি, একদিনের জন্যও তিনি বিশ্রাম নেননি।’
বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব জানান, সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাতে চতুর্থবারের মতো রক্তক্ষরণ হয়েছে খালেদা জিয়ার। ফখরুল জানান, আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দলের কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এরপর নতুন কর্মসূচি দেবে বিএনপি।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কী দুর্ভাগ্য আমাদের, কী জাতি আমাদের। জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। সরকারের একজন মন্ত্রী গতকাল বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা নাকি বিএনপি যা বলতে বলেছে, তারা তাই বলেছেন। ধিক্কার দেই এই মন্ত্রীকে। যে কিনা নামিদামি এবং বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকদের বিদ্রুপ করেছেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি বলেছেন, আমরা কাগজপত্র বিদেশে পাঠিয়েছি। কূটনৈতিকদের সামনে তিনি বলছেন। কেন বলছেন? কূটনীতিকরা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা ইতোমধ্যে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন (খালেদা জিয়াকে) দেশের থেকে বাইরে পাঠাও, বিদেশে চিকিৎসার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এমন কোনও মানুষ নাই যে চায় না খালেদা জিয়ার বাইরে চিকিৎসা হোক। মায়েরা রোজা রাখছেন, গৃহবধূরা রোজা রাখছেন, মানত করছেন যে আল্লাহ খালেদা জিয়াকে হায়াত বাড়িয়ে দাও। এই কোটি কোটি মানুষের ফরিয়াদ নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে পৌঁছাচ্ছে। তিনি আবারও খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনবেন।’
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা মিথ্যাচার করছেন। যে আইনের কথা বলেন, সেই আইনেই এই সুযোগ আছে। দায় নিতে হবে সরকারের, শেখ হাসিনার সরকারের। যদি খালেদা জিয়ার কোনও ক্ষতি হয়, তাহলে এই দেশের মানুষ কোনও দিনই আপনাদের রেহাই দেবে না।’
স্থানীয় সরকারের নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হয়েছে। দেখেন, শুরু হয়েছে পতন। অর্ধেকের বেশি ইউপিতে তারা হেরে গেছে। এই পতন শুরু হয়েছে।’
বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভয়ানক অসুস্থ। তাকে বাঁচাতে হলে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। জনগণকে বলতে চাই, আপনারা রুখে দাঁড়ান। তাকে সুস্থ করে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।’ তার অভিযোগ, ‘খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিনা চিকিৎসায় যদি কিছু হয়, কে জানে ফলাফল কী হবে। অবনতি হলে সরকার দায়ী থাকবে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, আহমেদ আযম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম প্রমুখ।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার আগেই সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। নেতারা দাবি করেছেন, কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল, মালিবাগ থেকে প্রিতম হোটেল এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল নেতাকর্মীদের অবস্থান। বিকাল সোয়া চারটার দিকে সমাবেশ হওয়ার পর এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত কোনও গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি। সড়কে প্লাস্টিকের ত্রিপল ও কারপেট বিছিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। হাতে হাতে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান তারা।
সমাবেশ শেষ হওয়ার পর কয়েক প্লাটুন পুলিশ নয়া পল্টন এলাকায় অবস্থান নেয়। সড়ক থেকে ধীরে-ধীরে নেতাকর্মীদের সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে নয়া পল্টনের সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।