এক পুলিশ কর্মকর্তার ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার সমালোচনা করে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন আলোচিত ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
শনিবার (৭ আগস্ট) রাতে অব্যাহতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, অব্যাহতির বিষয়টি জানলেও এখনও চিঠি হাতে পাইনি। অব্যাহতির চিঠি হাতে পেলেই এর জবাব দেব। চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে আজীবন দলের ভালোর জন্য কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, থানার একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া ঠিক হয়নি। ফেসবুক লাইভে এটা বলেছিলাম। জয়বাংলা স্লোগানকে খাটো করা হয়নি বা এ নিয়ে অযাচিত কিছু বলিনি আমি।
অব্যাহতির বিষয় সায়েদুল হক সুমন বলেন, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ আমাকে কমিটিতে নিয়েছিলেন। তিনিই যদি মনে করেন আমাকে বাদ দিলে দলের ভালো হবে, তাহলে সাংগঠনিক এ সিদ্ধান্ত মেনে নেব। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে আজীবন দলের ভালোর জন্য কাজ করে যাব।
জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি দলীয় কর্মসূচিতে স্লোগান দিয়েছিলেন সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন। ‘শুভ শুভ দিন শেখ কামালের জন্মদিন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’ ওই স্লোগানের ২৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। প্রকাশ্যে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে স্লোগান দিয়ে সরকারি বিধিমালা ১৯৭৯ লঙ্ঘন করেছেন এমন কথাও বলেন কেউ কেউ। যুবলীগ নেতা ব্যারিস্টার সুমন এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেন। যে কারণে তাকে যুবলীগের পদ থেকে অব্যাহতি পেতে হলো।
৬ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে ওসির এ স্লোগানের নিন্দা জানান যুবলীগ নেতা ব্যারিস্টার সুমন। বলেন, ‘শেখ কামাল সাহেবের জন্মদিনে শরীয়তপুরের পালং থানার ওসি আক্তার হোসেনের আওয়ামী লীগের দলীয় স্লোগান দেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই জিনিসটা দেখার পর আমার কাছে মনে হয়েছে দু-একটা কথা বলা দরকার। আওয়ামী লীগের স্লোগান দেওয়ার মানুষ কী এতই কম যে একজন ওসি সাহেবের এই স্লোগান দিতে হবে। আমি খেয়াল করে দেখলাম যে উনি বলছেন আবেগ থেকেই স্লোগান দিয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে, আপনি যখন সরকারি দায়িত্বে থাকবেন কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আবেগ দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে পানিশমেন্ট নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু তিনি এখনও ওই জায়গাতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন।’
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থেকে দলের স্লোগানের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানোয় তাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগেও ‘অতিবিপ্লবী’ আচরণের জন্য ব্যারিস্টার সুমনকে শোকজ করা হয়েছিল। তবে সেই শোকজের ‘সঠিক’ জবাব সুমন দিতে পারেননি বলে যুবলীগ থেকে জানানো হয়।
২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর যুবলীগের ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন সুমন।
হবিগঞ্জের সায়েদুল হক সুমন ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করার পর ২০০৯ সালে লন্ডনে চলে যান। সেখানে সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে বার অ্যাট ল’ করেন। সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী ব্যাপক পরিচিতি পান তার ‘ফেসবুক লাইভের’ মাধ্যমে। যেখানে অনিয়ম, সেখান থেকে ফেসবুক লাইভে গিয়ে নজরে আসেন তিনি। শত শত ব্যবহারকারী সেই ফেসবুক লাইভ শেয়ার করে ছড়িয়ে দেন, আর হাজার হাজার ভিউয়ার তা প্রত্যক্ষ করেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হন। এভাবেই পরিচিতমুখ হয়ে ওঠেন ব্যারিস্টার সুমন।