বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের সুবর্ণ-জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পাঁচটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান অংশ নিবেন।
বাংলাদেশের সরকারের মুখ্য তথ্য কর্মকর্তা সুরৎ কুমার সরকার বাসসকে বলেন, ‘আমন্ত্রিত সম্মানিত বিদেশী অতিথিদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপের চারজন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান পৃথক অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন।’
তিনি আরো বলেন, বিদেশী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ অনুরূপ পৃথক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। মোদি এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ছাড়াও টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার পরিদর্শনসহ ঢাকার বাইরে তিনটি স্থানে যাবেন।
সরকার বলেন, মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বিদেশী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ ভিন্ন ভিন্ন তারিখে বাংলাদেশে আসবেন এবং তারপর দেশে ফিরে যাবেন। মোদি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের মূল অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন পরে গণমাধ্যমে এক ব্রিফিংকালে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফরকারী সকল রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন। তবে, ‘তাদের এ সফরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদান করা’।
মোমেন ব্রিফিংকালে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার সম্ভাব্য বিষয় নিয়ে অনুমান ভিত্তিক খবর প্রকাশ না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আগামী ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের দ্বিতীয় দিনে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করবেন। তাঁদের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা এবং সফররত দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনাকালে বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিদেশী কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো ধারণা করছে যে, চীন, কানাডা ও ফ্রান্সের সরকার প্রধানগণ এবং জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে সরকার ও বাংলাদেশীদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে ভিডিও বার্তা পাঠাবেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ-জয়ন্তী উদযাপনটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত-বার্ষিকীর সাথে একই বছরে উদযাপিত হতে যাচ্ছে। বিদেশী আমন্ত্রিত সম্মানিত অতিথিরা বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
জাদুঘরটি মূলত স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি’র বেসরকারি বাসভবন ছিল। এখানেই ১৯৭৫ সালে এক সেনা-অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকা- থেকে তাঁর বড় মেয়ে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। এ সময় তাঁরা এক সংক্ষিপ্ত সফরে জার্মানীতে ছিলেন। বর্বারোচিত এই হত্যাকা-ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি’র ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়।
সফরসূচি অনুযায়ী, সকল বিদেশী নেতা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনে যাবেন, বিশেষ সামরিক কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করবেন, রাষ্ট্রীয় ভোজ-সভায় অংশ নিবেন এবং বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
সরকার বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর গ্রামে তাঁর মাজার পরিদর্শনে যাবেন। এছাড়া তিনি ঢাকার বাইরে গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় দুটি হিন্দু মন্দির পরিদর্শন করবেন।
এই মন্দিরগুলো বিশেষত হিন্দু মাতুয়া সম্প্রদায়ের প্রার্থনার স্থান। এদের একটি বড় অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বাস করে।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ প্রথম শীর্ষ বিদেশী আমন্ত্রিত সম্মানিত অতিথি হিসেবে ১৭ মার্চ ঢাকায় পৌঁছুবেন। তিনি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। এরপর ১৯ মার্চ দুই দিনের সফরে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে বাংলাদেশে আসবেন।
নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী দুই দিনের সফরে ২২ মার্চ ঢাকা পৌঁছবেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ২৪ ও ২৫ মার্চ ঢাকা সফর করবেন। মোদি ২৬ মার্চ বাংলাদেশ পৌঁছে পরের দিন দেশে ফিরবেন।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, বাংলাদেশ মূলত গত বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশত-বাষির্কী বর্ণাঢ্যভাবে উদযাপন করার পরিকল্পনা গ্রহন করেছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় পরিকল্পনাটি পরিবর্তন করা হয়।
বাসস
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।