জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২ হাজার ২২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পঞ্চবটি হতে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন করেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন।
সভাশেষে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি জানান, আজ একনেকে মোট ৪টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর বাস্তবায়ন খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯০৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে। অনুমোদিত ৪ প্রকল্পের মধ্যে দু’টি নতুন প্রকল্প এবং বাকী দু’টি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।
পঞ্চবটি হতে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন-আল-রশিদ বলেন, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানুয়ারি ২০২১ হতে জুন ২০২৫ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। পঞ্চবটি হতে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত বিদ্যমান সড়ক দুই-লেনে প্রশস্তকরণ ও দুই লেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ জেলার সাথে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও ব্যয় সাশ্রয়ী হবে। প্রকল্প এলাকা ধরা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা এবং মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা।
মামুন-আল-রশিদ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মুন্সীগঞ্জ জেলার সাথে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার অধিকতর উন্নত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহনসমূহ ঢাকা শহরে প্রবেশ না করে ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করতে পারবে।
প্রকল্পের আওতায় ৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও ২৫ মিটার সেতু নির্মাণ করা হবে। ২৪৮ ঘন মিটার বক্স কালভার্ট, ২৫ দশমিক ৩১ কিলোমিটার ড্রোন, ২০ হাজার ১৯৩ বর্গমিটার রোড মার্কিং, টোল প্লাজা ৪টি, টোল মনিটরিং ভবন-৩টি, ওজন স্টেশন-৬টি ও ৬১৭৫ বর্গমিটার ট্রাক স্ট্যান্ড নির্মাণ করা হবে।
ব্রিফিংয়ে শামসুল আলম জানান, এননেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের নামের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আনার নির্দেশ দিয়ে ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ এর পরিবর্তন করে ‘ডাবল ডেক সড়ক’ করার কথা বলেন।
তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী দ্রুতগতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন, যাতে ২০২৫ সাল বা নির্ধারিত সময়ে মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ হয়।
এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী উন্œয়ন প্রকল্পে সংশোধনী আনার প্রবনতা পরিহারের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন এবং যেকোন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার বিষয়ে সতর্ক হতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে, এর কারণ চিহ্নিত করে সেসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শামসুল আলম জানান, চরখালী-তুষখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পের সংশোধনীর জন্য ৪৪ দশমিক ৪৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ হওয়ার পেছনের মূল কারণ কি, প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে তার ব্যাখ্যা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের সড়কসমূহে যেন যানজট তৈরি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর জন্য গুণগত মানের সড়ক নির্মাণ করার নির্দেশ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলে এক নতুন প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হবে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট শক্তিাশালী করার প্রয়োজন।
আজ অনুমোদন পাওয়া বাকি দুই প্রকল্প হলো-কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘কৃষি তথ্য সার্ভিস আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ শক্তিশালীকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ’ প্রকল্প।
বাসস
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।