গরমে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়ায় ব্যাপক হারে আক্রান্ত
হাসপাতালে পর্যাপ্ত স্যালাইন ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
গরমে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়ায় ব্যাপক হারে আক্রান্ত
হাসপাতালে পর্যাপ্ত স্যালাইন ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
প্রচণ্ড গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। সর্দি, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, হিট স্ট্রোকসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে ব্যাপক হারে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এতে সারা দেশে হাসপাতালগুলোতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, সববয়সের মানুষের কষ্ট হলেও এই গরমে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন কিডনি, ক্যানসার, লিভার ও হার্টের রোগী এবং শিশু ও বয়স্করা। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর প্রায় ৭০ শতাংশই তারাই। তাই গরমে সুস্থ থাকতে অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে না যাওয়া, সুতি কাপড় পরা এবং গরমে লবণমিশ্রিত পানি পান, বেশি বেশি পানি পান, ঘর ঠাণ্ডা রাখা (যাদের এসি নেই তারা ঘরের মধ্যে বালতিতে বরফ পানি রাখা ও ঘরের পর্দা ভিজিয়ে রাখা), পচা-বাসি ও খোলা খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন সারা দেশে সব সরকারি হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, কোনো রোগী চিকিৎসার বাইরে থাকবে না। হাসপাতালে পর্যাপ্ত স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। শনিবার বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), দেশের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে, যাতে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা হয়। যেসব রোগীর অপারেশন দেড় মাস পরে করলে সমস্যা হবে না, সেসব রোগীর অপারেশন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সারা দেশে। একই সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজে ক্লিনিক্যাল ক্লাসগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশনা পেয়ে সারা দেশে ডাক্তার ও নার্সরা বিরামহীনভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট (শিশু হাসপাতাল), স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে এসব হাসপাতালে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত কয়েক দিনের গরমে শুধু ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই শতাধিক শিশু। মুগদা হাসপাতালের শিশু বিভাগেও ইতিমধ্যে রোগীতে সব শয্যা পূর্ণ হয়ে গেছে। উপজেলা, জেলা সদর ও সারা দেশে সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই চিত্র। এই সুযোগে সরকারি হাসপাতালের একশ্রেণির কর্মকর্তারা পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য রোগীদের বাইরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। নিচ্ছেন কমিশন।
গরমজনিত রোগে কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুররা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। হিট স্ট্রোকেও তারাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। তাদেরকে সরকারি হাসপাতালের বাইরে পাঠিয়ে গরিব রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, গরমের কারণে হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বর, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জন্ডিসে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। শিশুদের সর্দি, কাশি, ভাইরাল জ্বর ও ডায়রিয়া বেশি হচ্ছে। চিকিৎসকরা সতর্ক থাকার প্রস্তাব দিয়েছেন। সতর্ক থাকলে ঘরে বসে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে গরম এড়িয়ে চলা। গরমে কীভাবে নিরাপদ থাকতে হবে, সেই পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। প্রয়োজন না হলে শিশু ও বৃদ্ধরা যেন বাইরে না যায়। বাইরে গেলে রোদ এড়িয়ে যেতে হবে। রাস্তাঘাটের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। লবণমিশ্রিত পানি পান করতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে। ঘরের মধ্যে এসি না থাকলে বালতির মধ্যে বরফ দিয়ে রাখতে হবে। পর্দাগুলো ভিজিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, গরমে খেটে খাওয়া মানুষ, রিকশাওয়ালা ও শ্রমিকরা বেশি কষ্ট পাচ্ছেন এবং নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া লিভার, কিডনি ও হার্টের রোগীরা প্রয়োজন না হলে যেন ঘরের বাইরে না যায়। লবণমিশ্রিত পানি খেতে হবে। রাস্তার খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। রাস্তাঘাটে শ্রমিকদের তাল পাতার মাথাল ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যতটা পারা যায় রোদ এড়িয়ে চলতে হবে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাফি আহমেদ বলেন, প্রচণ্ড গরমে বয়স্কদের সঙ্গে সঙ্গে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, ভাইরাল জ্বর বেশি হচ্ছে। এ থেকে রক্ষা পেতে পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। ঘর ঠাণ্ডা রাখতে হবে। পচা-বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। গরমে খাবারে পচন ধরে, ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস দেখা দেয়। এসব খাবার পরিহার করতে হবে। ঘরের দরজার পর্দা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ঘরের মধ্যে বালতিতে বরফ দিয়ে পানি রাখতে হবে। দরজা, জানালা সকালে বন্ধ রেখে এগুলো করতে হবে। বিকালে দরজা-জানালা খুলতে হবে, যখন রোদ না থাকে। শিশুদের কোনো অবস্থাতেই বাইরে গরমে নেওয়া যাবে না। সুতি, ঢোলা কাপড় পরিধান করতে হবে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক ও বাংলাদেশের প্রখ্যাত নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, গরমে সব বয়সে হিট স্ট্রোক হতে পারে। তবে বয়স্ক ও শ্রমজীবী মানুষদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সর্বাধিক। লবণমিশ্রিত পানি খেতে হবে। যতটুকু সম্ভব গরম এড়িয়ে থাকতে হবে। ঠাণ্ডা জাতীয় তরল খাবার খেতে হবে। সুতি, ঢোলা কাপড় পরিধান করার পরামর্শ দেন তিনি।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।