দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদের জন্য ঢাকা বিভাগে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বেশি। সিলেট বিভাগের ক্ষেত্রে এ চিত্রটা ঠিক উলটো। শুক্রবার বিক্রি শুরুর দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগ থেকে সবচেয়ে কম ফরম কিনেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ফরম বিক্রি ও জমার শেষ দিন আজ মঙ্গলবার। জানা গেছে, গত তিন দিনে মোট ৩ হাজার ১৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৬২৪, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৭১, খুলনা বিভাগে ৩৭৪, বরিশাল বিভাগে ২৩০, রংপুর বিভাগে ২৭৩, রাজশাহী বিভাগে ৩৬৪, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬৮টি এবং সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৫০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এসব ফরম বিক্রি করে আওয়ামী লীগের আয় হলো ১৫ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
নির্বাচনে প্রার্থী হতে গতকাল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন এবং পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক। নেত্রকোনা-৫ আসনের (পূর্বধলা উপজেলা) জন্য ফরম সংগ্রহ করেছেন অধ্যাপক আনোয়ার। ঐ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হলেন আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল। তারা দুই জনই মুক্তিযোদ্ধা—বেলাল পূর্বধলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং আনোয়ার হোসেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য। তারা প্রয়াত কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এবং আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করা আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতিও ছিলেন। ২০১২-২০১৪ সময়ে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। সুনামগঞ্জ-৪ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হতে ফরম কিনেছেন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক। এ আসনটি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। সুনামগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির (জাপা) পির ফজলুর রহমান মিছবাহ। শিক্ষাসচিব এবং নির্বাচন কমিশনের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মদ সাদিক এক জন কবি হিসেবেও পরিচিত। কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৭ সালে বাংলা একডেমির পুরস্কার পান তিনি।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের তিন নেতা। তারা হলেন—বাসদের সভাপতি রেজাউল রশিদ খান, সদস্য হামিদুল, সদস্য মো. বকুল হোসেন। শনিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তারা। রেজাউল রশিদ খান সিরাজগঞ্জ-৬ আসন, হামিদুল সুনামগঞ্জ-২ ও মো. বকুল হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ফের নৌকার প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে নড়াইল-২ আসনে মাশরাফির পক্ষে ফরম সংগ্রহ করেন নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস। ক্যারিয়ারে দেড় যুগ ক্রিকেট খেলে মাশরাফি রাজনীতিতে আসেন ২০১৮ সালে। ঐ বছর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে দাঁড়িয়ে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। গত বছর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ককে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের অ্যাকশন হিরো মাসুম পারভেজ রুবেল। বরিশাল-৩ সংসদীয় আসনের জন্য মনোনয়ন তুলেছেন তিনি। এই নায়কের বড় ভাই আরেক খ্যাতিমান চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে ২০০৯ সালে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ গ্রহণ করে দলটিতে যোগ দেন। এরপর জাপার প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নির্বাচনবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান সোহেল রানা। সেই থেকে তিনি জাপা নেতা হিসেবেই রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত। তবে রুবেল কিনলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম। মনোনয়ন ফরম তোলার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রুবেল দাবি করেন, ‘আমি ছাত্রজীবন থেকেই জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আসছি। অভিনয় জগতের অন্যদের মতো আমি নতুন করে রাজনীতিতে আসিনি। আমার শেকড়ই আওয়ামী লীগের।’ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে ঢাকা-১৭ এবং টাঙ্গাইল-১ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ছোট পর্দার অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে জয়ী হন প্রয়াত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা হলে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন সিদ্দিক। সিদ্দিকের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা আরেকটি আসন টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর ও ধনবাড়ী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। বিকালে বড় শোডাউন সহকারে টাঙ্গাইল-১ আসনে আবারও মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র জমা দেন ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। একই পরিবেশে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ঢাকা-১৩ এবং বরিশাল-৫ আসনে জাহাঙ্গীর কবির নানক। কিশোরগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দেন বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা ও বিডিআর বিদ্রোহের সাবেক প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাহার আকন্দ, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের ফরম নিলেন আওয়ামী লীগে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর নাতি শেহেরিন সেলিম রিপন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম নেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মশিউর রহমান হুমায়ুন।
পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজউদ্দিন আহমেদ। বর্তমানে এই আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবু অব্বাস। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য গত ১৮ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। গতকাল বিকালে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাজির হয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেন তিনি। পাবনা-৪ আসন (ঈশ্বরদী-অটঘরিয়া) থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ডা. সাহেদ ইমরান। ময়মনসিংহ-৯ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে নান্দাইল থেকে সংসদ সদস্য ছিলেন। যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন থেকে মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি, যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসন থেকে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন বর্তমান সংসদ সদস্য, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য।
শনিবার সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে আওয়ামী লীগ। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন উত্সবের আমেজে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এবার দলটির মনোনয়ন ফরমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। গতকাল ৭৩৩টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি ৭০৯ জন আর অনলাইনে ২৪ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছেন দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। যা গত তিন দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, তৃতীয় দিন গতকাল ঢাকা বিভাগে ১৬৬টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬৫টি, সিলেট বিভাগ ৩৩টি, ময়মনসিংহ বিভাগ ৫৮টি, বরিশাল বিভাগে ৭৬টি, খুলনা বিভাগে ৯০টি, রংপর বিভাগে ৬২ ও রাজশাহী বিভাগে ৫৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর বাইরে অনলাইনে ২৪টি ফরম বিক্রি হয়েছে। এদিকে সাংগঠনিক সক্ষমতা জানান দিতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যাপক শোডাউন চলেছে গত তিন দিন। মিছিল-স্লোগানে মুখর কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।