গ্যালারিতে লাখো দর্শকের নীল–সমুদ্র, ক্ষণে ক্ষণে সেই সমুদ্রের গর্জন, আর প্রতিটি চার–ছয়ে আতশবাজি ও আলোর ফোয়ারা—উৎসব আর উচ্ছ্বাসের মহামঞ্চ প্রস্তুত ছিল ভারতের জন্য। ফাইনালের পথে একের পর এক প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে আসা রোহিত শর্মাদের হাতে ট্রফি দেখতে মাঠে উপস্থিত স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।
কিন্তু বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে কঠিন লড়াই আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞায় সব প্রতিকূলতা উড়িয়ে দেওয়ার চিরন্তন সেই অস্ট্রেলীয় চরিত্র কি তাতে দমে যেতে পারে? পারে না বলেই বিরাট কোহলিকে বোল্ড করে গর্জন করতে থাকা গ্যালারিকে চুপ করিয়ে দেন প্যাট কামিন্স, টুর্নামেন্টে কখনো ১০ উইকেট না হারানো ভারতকে অলআউট করে দেয় অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আর ২৪০ রান তাড়ায় ৪৭ রানে তিন উইকেট হারিয়েও ট্রাভিস হেড আর মারনাস লাবুশেন মিলে গড়ে ফেলেন ১৯২ রানের জুটি। টুকরো টুকরো এসব দৃশ্য আর ঘটনারই যোগফল
৫৮ রানে অপরাজিত থেকে যিনি জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছেড়েছেন, সেই লাবুশেনের চোখে এই জয় অবিশ্বাস্য। বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলেই নাম না থাকা এই ব্যাটসম্যান অ্যাস্টন অ্যাগারের চোটে বিশ্বকাপ দলে দরজা খুঁজে পেয়েছিলেন। সেই তিনি–ই বিশ্বকাপ জেতানো জুটির অংশ হয়ে ম্যাচ শেষে কথা বললেন ভেজা চোখে, ‘অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। ভারত এই টুর্নামেন্টের সেরা দল। কিন্তু আজ আমাদের বোলাররা দুর্দান্ত ছিল। এরপর কী এক ব্যাটিং প্রদর্শনীই না দেখিয়েছে ট্রাভিস। সব মিলিয়ে যা কিছু ঘটেছে, সবই অবিশ্বাস্য। আমি আসলে বলার মতো আর কথা খুঁজে পাচ্ছি না।’
লাবুশেন যাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন, সেই ট্রাভিস হেড অবশ্য অনেক কথাই বলেছেন। চোটের কারণে টুর্নামেন্টের প্রথম দিকে বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে থাকতে পারেননি। লিগ পর্বের ষষ্ঠ ম্যাচে মাঠে নেমেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন ১০৯ রানের ইনিংস। এরপর সেমিফাইনালে ম্যাচসেরা ৬২। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে কাল ফাইনালে খেলা ১২০ বলে ১৩৭ রানের ইনিংসটি। ভারতের এগারো ব্যাটসম্যানের চেয়ে (১৬) বেশি বাউন্ডারি (১৯) মারা এই বাঁহাতি নাকি শুরুতে কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলেন, ‘বিশ্বকাপ জয়ের অংশ হতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত। শুরুতে কিছুটা নার্ভাস ছিলাম, কিন্তু মারনাস অসাধারণ একটা ইনিংস খেলেছে, আমার ওপর থেকে চাপটা সরিয়ে নিয়েছে।’
হেড ও লাবুশেনের এটি প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা হলেও ডেভিড ওয়ার্নারের জন্য দ্বিতীয়। ৩৭ বছর বয়সী এই ওপেনার ফাইনালে ব্যাট হাতে ভালো না করলেও ফিল্ডিংয়ে ছিলেন দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে অবশ্য বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে সবকিছুর ভূমিকাই টেনে এনেছেন ওয়ার্নার, ‘প্রথম বল থেকে বোলাররা সুর বেঁধে দিয়েছে। আর ফিল্ডিং তাতে সহায়তা করেছে। (ব্যাটিংয়ে) ড্রেসিংরুমে কিছুটা নার্ভাসনেস শুরু হয়েছিল। তবে হেড–মারনাস সেটা দূর করে দেয়।’
ওয়ার্নারের মতো দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছেন জস হ্যাজলউডও। ডানহাতি এ পেসারের মতে, ভারতের লাখো দর্শকের সামনে তাদেরই দলকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতাটা ২০১৫ সালে মেলবোর্নে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে পাওয়া জয়ের চেয়েও বড়, ‘আমি তো এটাকেই এগিয়ে রাখব। এত দর্শক, ভারতের দর্শকের কাছাকাছিও কেউ নেই। আমাদের বিশ্বকাপ জয়ে এটাও হিসাবে রাখতে হবে।’
দর্শকদের নিয়ে কথা বলার সময় গ্যালারিকে ‘নীল সমুদ্র’ বলেছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। এ বছর তাঁর নেতৃত্বে ইংল্যান্ডে অ্যাশেজে ড্র করেছে অস্ট্রেলিয়া, তাঁর আগে ভারতকে হারিয়ে জিতেছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফিও। কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন প্রশ্নে কোনো দ্বিধাই রাখেননি অ্যালান বোর্ডার, স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং ও মাইকেল ক্লার্কের পর অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী নতুন অধিনায়ক, ‘এ বছর আমাদের যত সাফল্য, সবার ওপরে থাকবে এটি। একেবারে চূড়ায়।’
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।