আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তপসিল অনুযায়ী ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার শরিকরা। অন্যদিকে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের মিত্ররা তপসিল প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে হরতাল-অবরোধসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে তারা। এ অবস্থায় তপসিল ঘোষণা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে ভোটের ঘোষিত তারিখ পেছাতেও আপত্তি নেই কমিশনের। সেজন্য আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, বিএনপি নির্বাচন এসে যদি সহায়তা চায় আমরা অবশ্যই সহায়তা করব। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব আমাদের না। যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেবে, তাদের জন্য যতরকম চেষ্টা করা তা করা হবে।
গত বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণের মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তপসিল ঘোষণা করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতভেদ সমাধান অসাধ্য নয়, মন্তব্য করে সংঘাত পরিহার করে দলগুলোকে সদয় সমাধান খুঁজতে বলেন তিনি। এর আগেও রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবেই সমাধানের পরামর্শ দেন সিইসি। ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে অপূর্ণতা থেকে যাবে’ ‘বিএনপি না এলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না’ এবং ‘বিএনপি না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না’ বিভিন্ন সময় এমন বক্তব্যও দেন তিনি। নির্বাচনের তপসিল ঘোষণা হয়ে গেলেও রাজনৈতিক সমঝোতা হলে যে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভোটের তারিখ পেছাতেও সমস্যা নেই ইসির।
তপসিল ঘোষণার পর ইসিতে জোটবদ্ধ নির্বাচনের তথ্য জানিয়েছে ১০টি রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল ইতিমধ্যেই মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। জাতীয় পার্টি-জাপাও এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছে। দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের তপসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে প্রার্থীদের আয়কর রিটার্নের সুবিধার্থে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় সাত দিন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। এ সময় রাষ্ট্রপতি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন বলে রওশন এরশাদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারবিরোধী বিএনপি জোট এখন পর্যন্ত নির্বাচন বর্জনের পথে রয়েছে। এক দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে তারা। চলমান সংকট নিরসনে শর্তহীন সংলাপের পরামর্শ দিয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে তপসিল ঘোষণার ঠিক আগে চিঠি দেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। বিএনপির শর্তের কারণেই সংলাপ সম্ভব নয় বলে তার চিঠির জবাবে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপিও চিঠি দিয়ে বলেছে, আবারও একতরফা নির্বাচন করার জন্যই ক্ষমতাসীনরা আলোচনায় রাজি নয়। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে। নির্বাচনের তপসিল ঘোষণা ও ডামাঢোল শুরু হয়ে গেলেও সংলাপের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি বলে মনে করছেন নির্বাচন ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা। সেজন্য দলগুলোর সদিচ্ছাই ও আন্তরিকতাই যথেষ্ট বলে মত তাদের।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলেন, আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ভোটের পরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে সপ্তাহখানেক সময়ই যথেষ্ট, যদিও ৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
কীভাবে ভোটগ্রহণ স্বচ্ছ হবে জানতে চাইল কমনওয়েলথের প্রতিনিধিরা : বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ স্বচ্ছ করার পদ্ধতিগুলো নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছে কমনওয়েলথের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রতিনিধিদল। তবে ভোটের সময় কমনওয়েলথ থেকে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কিনা তা নিশ্চিত করেনি। প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কমনওয়েলথের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। তিনি বলেন, প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের নির্বাচনসংক্রান্ত আইন-কানুন, বিধিবিধান, নির্বাচন পদ্ধতি, নির্বাচনের দিনে যানবাহনসংক্রান্ত ব্যবস্থা—এসব বিষয়ে কমিশনের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইসির পক্ষে তাদের বিস্তারিত সবকিছু জানিয়েছেন। তাতে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
সচিব আরও বলেন, ‘এটি তাদের একটি পূর্ববর্তী বা অগ্রবর্তী দল। এই অগ্রবর্তী দল কমনওয়েলথে গিয়ে রিপোর্ট দেবে। রিপোর্ট দাখিলের পরে কমনওয়েলথের পূর্ণাঙ্গ টিম আমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে সম্মতি জানাবে কি জানাবে না, তা তারা পরে নির্ধারণ করবে।’
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা কী জানতে চেয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বা অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি। শুধু নির্বাচন পদ্ধতি, নির্বাচনের কর্মপদ্ধতি, নির্বাচনসংক্রান্ত আইনকানুন, বিধিবিধান, কীভাবে ভোটগ্রহণ হবে, ভোটাররা কীভাবে ভোট দিতে পারবেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা, ভোটাররা ভোট দিতে কী কী সুযোগ-সুবিধা পাবেন, যারা নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবেন বা বিদেশে যারা ভোটার আছেন, তাদের ভোট কীভাবে নেওয়া যাবে, পোস্টাল ব্যালট-এসব বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছেন।
বৈঠক শেষে কমনওয়েলথের প্রতিনিধিদলের প্রধান (ইলেকটোরাল সাপোর্ট গভর্নেস অ্যান্ড পিস ডিরেক্টর) লিনফোর্ড অ্যানড্রিউস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মূলত নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রি-ইলেকশন অ্যাসেসমেন্ট মিশনের অংশ হিসেবে আমরা এসেছি। যে কোনো সদস্য দেশেই কমনওয়েলথ ভোট পর্যবেক্ষক পাঠানোর আগে প্রাক-নির্বাচন পরিস্থিতি মূল্যায়ন প্রতিনিধি পাঠায়। কমনওয়েলথ পর্যবেক্ষক পাঠালে নির্বাচন কমিশন কতটুকু সহায়তা দিতে পারবে, তা নিয়ে ভালো আলোচনা হয়েছে।’ চার সদস্যের এই প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন ইলেকটোরাল সাপোর্ট সেন্টারের পলিটিক্যাল অ্যাডভাইজার লিন্ডিউই মাললেকা, একজিকিউটিভ অফিসার জিপ্পি ওজাগো এবং অ্যাসিসটেন্ট রিসার্চ ফিসার সার্থক রায়।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।