প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ তাঁর দলের নেতাকর্মীদের কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তার দলের নেতাকর্মীসহ কাউকে যেন কষ্ট না পেতে হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেছেন। এক বৈঠকে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমার একটা নেতাকর্মী যেন কোন কষ্ট না পায়, দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায়, আমরা সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন অনুযায়ী, বাংলাদেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কেউ আর হতদরিদ্র, গৃহহীন ও ক্ষুধার্ত থাকবে না, সেজন্য সরকারের পদক্ষেপে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কোন এলাকায় যেন কোন একটা মানুষও গরিব না থাকে, ভিক্ষা করে খেতে যেন না হয়, কেউ যেন কষ্ট না পায়, তাদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীর এটা মাথায় রাখতে হবে যে, শুধু আমি খাবো, আমি ভালো থাকবো, আমি শান শওকতে থাকবো, আর আমার পাড়া প্রতিবেশি খাবে না- এটা যেন না হয়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের কর্মীদের পাশাপাশি দেশবাসীকে মনে করিয়ে দেন যে, চলমান করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বিগুণ আঘাতের কারণে বিশ্ব এখন এক সংকটময় অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কাজেই প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি তাঁর আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে, এমন কি আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের মতো বড় দেশগুলো এখন খাদ্য সংকটে ভুগছে। আমরা এখনও ভালো অবস্থানে আছি এবং ভালো থাকার চেষ্টা করছি, এরজন্য দেশবাসীর সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী আবারও সকলকে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহবান জানান যাতে করে আমাদেরকে কোন সংকটে পড়তে না হয়।
তিনি বলেন, প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে কিছু না কিছু উৎপাদন করে এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা রাখে তাহলে বাংলাদেশে কোন অভাব থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে, প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দিয়েছে এবং সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। যদিও দেশে-বিদেশে কিছু লোক আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন: ‘শেখ হাসিনার সরকারের দোষ কী? কী অপরাধে তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়?’
তৃণমূল কর্মীদের দলের লাইফলাইন হিসেবে উল্লেখ করে দলের সভাপতি বলেন, ‘আমাদের মাঠ কর্মীরা সব সময় কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারাই কিন্তু পার্টিটাকে ধরে রাখে এই কথাটা মনে রাখতে হবে।’
তিনি দলের নেতৃবৃন্দকে দলের প্রতিটি কর্মীর খোঁজ খবর নিতে এবং প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়াতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে জিয়া, খালেদা, এরশাদ, আইয়ুব ও ইয়াহিয়া খানের শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের কথা স্মরণ করেন এবং শত নির্যাতনের মধ্য দিয়েও আওয়ামী লীগ সংগঠন সব সময়ই শক্তিশালী বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতুতে যান চলাচল উদ্বোধনের পর আজ সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে পদ্মা পাড়ি দিয়ে সড়কপথে প্রথমবারের মতো গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর পৈতৃক বাড়িতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ।
জাতির পিতার সমাধিসৌধে শেখ হাসিনা ফাতেহা পাঠ করেন এবং জাতির পিতা এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাযজ্ঞের অন্যান্য শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার মহান স্থপতির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালোরাতে বিপথগামী কিছু সেনা সদস্যের দ্বারা পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নৃশংসভাবে নিহত হন।
শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পথে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পদ্মা সেতুতে কিছু সময় কাটিয়ে জাজিরা পয়েন্টের সার্ভিস এলাকায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন।
তিনি আজ বিকেলেই ঢাকার উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন।
গত ২৫ জুন উদ্বোধনের সময় দেশের দীর্ঘতম স্থাপনা পদ্মা সেতুর প্রথম টোল প্রদানকারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজও ঢাকা থেকে যাওয়া ও ফেরার পথে টোল প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে এই সেতু নির্মাণকালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে কেন নিজের টাকায় পদ্মা সেতু, সে কারণও ব্যাখ্যা করেন।
পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে নিজের পৈত্রিক নিবাসে এসে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে শেখ হাসিনা তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে আসার ইচ্ছা ছিল বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ^ ব্যাংকের উল্লেখিত দুর্নীতির ভুয়া অভিযোগ কানাডার আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বক্তৃতাকালে অত্যন্ত সাদাসিদেভাবে জীবন কাটানো তাঁর ছোট বোন এবং জাতির পিতার ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে-মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া এবং কর্মবৃত্তান্তের অনেকটাই দলীয় নেতা-কর্মীদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘এইটুকু বলতে পারি আমি আজকে চার চারবার ক্ষমতায়। কই কেউ তো আমাকে বলেনি আমার এই চাকরি দাও, আমার এই ব্যবসা দাও, আমার এটা দাও, আমার সেটা দাও। নিজেরা চাকরি করছে, নিজেরা পড়ছে, ষ্টুডেন্ট লোন নিয়েছে, একটা করে কাজ করেছে আবার চাকরি করছে। সেই টাকা শোধ দিচ্ছে আবার পড়ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা ক্ষমতায় এসেছে ‘খাওয়া পার্টি’ হিসেবে, দেওয়ার জন্য নয়। আর আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে মানুষকে দিয়ে যাচ্ছে,মানুষের জন্য করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষের জন্য মানুষ। আমাদের দল করলে আমরা এটা প্রথমে বলে নেই এটা মনে রাখতে হবে- জাতির পিতা কিন্তু নিজের জন্য দল করেন নাই বা নিজের ক্ষমতার লোভে দল করা বা নিজের অর্থ সম্পদ বানানোর জন্য করেন নাই। তিনি করেছেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য।
পার্টি সভাপতি বলেন, কাজেই আমার যেটুকু আছে আমি যদি তা থেকে একটা গরীব মানুষকে দিতে পারি আর সে যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এটাইতো একজন নেতা হিসেবে আমার সার্থকতা। এটাই সব থেকে বড় সার্থকতা। আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে সেই আদর্শ মেনেই চলতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণের শক্তিই আমার কাছে প্রধান শক্তি। যে কারণে তাঁর সরকার বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণের পাশাপাশি বৃহৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ওপর বেশ কয়েকবার সংঘটিত প্রাণঘাতী হামলার প্রসংগ টেনে বলেন, আমার জীবনের ওপর বারবার হামলা হয়েছে। কিন্তু, মহান আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন কারণ আমি দেশের কল্যাণে কিছু করতে চাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারে যা কোভিড-১৯ ও বন্যা সফলভাবে মোকাবেলা করে প্রমাণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিনামূল্যে জনসাধারণকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দিয়েছে যা অনেক উন্নত দেশ করতে পারেনি।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।