বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অকটেন লিটারে ৮৯ টাকা থেকে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রল ৮৬ টাকা থেকে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এ দর গতকাল শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে কার্যকর হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে গতকাল রাত ১০টায় পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল রাতেই তেলের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়। তাতে দাম হয়েছিল ৮০ টাকা লিটার। তার আগে এই দুই জ্বালানি তেলের দাম ছিল লিটারে ৬৫ টাকা। দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যায় গতকাল জ্বালানি বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিগত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রিতে আট হাজার ১৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে যৌক্তিক মূল্য সমন্বয় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সরকার সব সময় আমজনতার স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। যত দিন সম্ভব ছিল তত দিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির চিন্তা করেনি। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই কিছুটা সমন্বয়ে যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে দিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করা হবে।
গতকালের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে পাশের দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়।
ভারত গত ২২ মে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২.৭৬ রুপি এবং পেট্রল লিটারপ্রতি ১০৬.০৩ রুপি নির্ধারণ করে। এই মূল্য বাংলাদেশি টাকায় যথাক্রমে ১১৪.০৯ টাকা এবং ১৩০.৪২ টাকা। (১ রুপি=গড় ১.২৩ টাকা)। বাংলাদেশে মূল্য কম থাকায় তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
এর আগে গতকাল বারিধারার বাসভবনে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন। তবে জনগণের দুর্ভোগ হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না। পাশাপাশি বলেছিলেন, চলতি অথবা আগামী মাসে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে।
এদিকে দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর গত রাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রল পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল বিক্রি ইচ্ছা করে বিলম্বিত করা হয় বলে অভিযোগ করেন ক্রেতারা। এ সময় রাজধানীর আসাদগেটের একটি পাম্পে তেল নিতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হতে দেখা যায়। তৈরি হয় যানজট। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা বলেন, ইচ্ছা করেই তেল দিতে দেরি করা হচ্ছে। কারণ রাত ১২টা বাজলেই তারা বেশি দরে তেল বিক্রি করতে পারবে।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরে গণপরিবহন মালিকরা অঘোষিতভাবে আজ যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু গত রাতে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে যাঁরা যানবাহন চালাতে চান তাঁরা চালাবেন। না চালালে আমাদের করার কিছুই নেই। তবে কোনো ধর্মঘট ডাকা হয়নি। ’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল রাত সাড়ে ১২টায় বলেন, ‘এভাবে দাম বৃদ্ধিতে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। আমরা গাড়ি চালানো বন্ধ রাখব। ’
আর চট্টগ্রাম আন্ত জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন জানিয়েছেন, সরকার যেহেতু জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে, তাই তাঁরা দুই দিন দেখবেন। ভাড়া সমন্বয় করা না হলে তখন তাঁরা বিকল্প চিন্তা করবেন।
সিলেটে প্রতিবাদ, সড়ক অবরোধ
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পর রাতে সিলেটে পেট্রল পাম্পগুলো তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয়। এ সময় জ্বালানি তেল সংগ্রহের জন্য পেট্রল পাম্পগুলোতে ভিড় জমান ক্রেতারা। নগরের বিভিন্ন পাম্পের সামনে গাড়ি ও মোটরসাইলেকচালকদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। নগরের পাঠানটুলা এলাকায় তেল না পেয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন ক্রেতারা। তবে ২০ মিনিট পর পুলিশ এসে তাঁদের সরিয়ে দেয়। সুবহানিঘাট এলাকায় বিক্ষুব্ধ লোকজন রাত সাড়ে ১০টায় সড়ক অবরোধ করে। রাত সাড়ে ১২টার দিকেও অবরোধ চলছিল।
নগরের শিবগঞ্জ এলাকার বিরতি পেট্রল পাম্পে গিয়ে তেল পাননি জানিয়ে ব্যবসায়ী ধ্রুব ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিরতি পাম্পে গিয়ে দেখি শত শত মোটরসাইকেলের ভিড়। কিন্তু তারা পেট্রল বিক্রি বন্ধ রেখেছে। ’