চলতি সপ্তাহের যে কোনো দিন গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। এই ঘোষণা আগামী রোবার বা সোমবার হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
শুক্রবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় সময়ের আলোকে কমিশন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, দাম কত বাড়ানো সে বিষয়ে এখনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। সরকার যতটুকু ভর্তুকি দেবে সেটা সমন্বয় করে যতটা দাম না বাড়ালেই নয় সেটুকু বাড়ানো হবে। সেটা নিয়ে এখনো কাজ চলছে। পেট্রোবাংলা চায় ১১৭ শতাংশ বাড়াতে। কিন্তু অতটা বাড়ালে জনজীবনে প্রচণ্ড চাপ পড়বে। কেননা গ্যাসের দাম বাড়ানোর সাথে সাথেই অন্য স্টেক হোল্ডাররা সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দেবে। কমিশন নির্দেশের অপেক্ষা করছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সংকেত দেওয়া হলে, সে অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হবে। সাধারণ মানুষের ওপর চাপ না পড়ে এ বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে।
এদিকে গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২ জুন) প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহি চৌধুরীর সঙ্গে দিনভর বৈঠক করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কর্মকর্তারা। জানা গেছে, বৈঠকে আবাসিকে গ্যাসের দাম যতটুকু বাড়ানোর কথা তার চেয়ে কিছুটা কম বাড়িয়ে সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য ও জ্বালানী বিশেষজ্ঞ মকবুল-ই-ইলাহী সময়ের আলোকে বলেন, গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে, কত বাড়বে সেটা চূড়ান্ত হয়নি। পেট্রোবাংলা চায় ১১৭ শতাংশ বাড়াতে।
সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর সরকার এই খাতে বিপুল পরিমাণ টাকা ভর্তুকি দেয়, কিন্তু বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রতিবছরই মুনাফা করে। তাদের মুনাফার একটি অংশ এলএনজি আমদানিতে ব্যবহারের সুযোগ রাখা হবে। বিইআরসির গ্যাসের দাম বাড়ানোর নির্দেশনায় এই সংক্রান্ত ঘোষণা থাকবে। বাজেটে ৬ হাজার কোটি টাকা এলএনজি আমদানির জন্য ভর্তুকি হিসেবে রাখা হয়েছে। এর বাইরে যদি আরও অর্থ প্রয়োজন হয় তাও সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
অপরদিকে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগকে অযৌক্তিক বলে আসছেন জ্বালানী বিশেষজ্ঞরা।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম সময়ের আলোকে বলেন, শুরু থেকেই বলে আসছি, এই দাম বাড়ানোর উদ্যোগ যৌক্তিক নয়। জ্বালানি উন্নয়ন তহবিল এবং সরকারের ক্রয় বাজেট থেকে ভর্তুকি দিলে দাম বাড়ানো লাগে না। উল্টো টাকা সারপ্লাস থাকে। এই অর্থ দিয়ে ফান্ড তৈরি করা যায়। গ্যাসের বিদ্যমান মূল্যহার বহাল রেখে সব পর্যায়ের ট্যাক্স-ভ্যাট, অযৌক্তিক ব্যয় কমিয়ে গ্যাসে আর্থিক ঘাটতি কমানো সম্ভব।
তিনি বলেন, যে পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হয় তা বহাল রাখতে হবে। যে পরিমাণ জ্বালানী সরবরাহ করার কথা ছিলো তা না করার কারণে যে উদ্ধৃত্ব রয়েছে তা সমন্বয় করতে হবে। এই দুটি কাজ করলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন আবাসিক খাতে দুই চুলার খরচ ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা আর এক চুলার খরচ ৭৫০ টাকা থেকে ৯২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গড়ে ৩২.০৮ শতাংশ মূল্য বাড়ানো হয়। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭.৩৮ টাকা থেকে ২.৪২ টাকা বাড়িয়ে ৯.৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সিএনজি গ্যাস প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা এবং বিদ্যুৎ ও সারের জন্য ৪.৪৫ টাকা। হোটেল রেস্তোরায় প্রতি ঘনমিটার ২৩ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩.৮৫ টাকা, শিল্প ও চা বাগানে ১০.৭০ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১৭.০৪ টাকা করা হয়।