প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার র্যাব ও এর কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটা একটি জঘন্য পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, ‘জঙ্গি দমন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, সুন্দরবন দস্যুমুক্ত এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করার ক্ষেত্রে র্যাবের ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। আমি মনে করি এই সমস্ত সাফল্যের পর র্যাব এবং এর কিছু কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা অত্যন্ত জঘন্য কাজ।’
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
র্যাব ফোর্সেস হেডকোয়ার্টার্সের শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য কোনো ধরনের অপরাধে জড়িত হলে শাস্তির বিধান রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু এটা দুঃখের বিষয় যে তারা কোনো দোষ বা কারণ ছাড়াই কিছু র্যাব সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের দেশে তারা তাদের বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয় না।’
এই প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুধুমাত্র পকেটে হাত দেয়ার জন্য এক শিশুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল এবং অন্য একটি ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য রাস্তায় একজনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিল।
তিনি বলেন, এই কারণে তারা শাস্তি পায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র যেখানে যে কোনো অপরাধে জড়িত থাকলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত দুঃখজনক যে তারা জঙ্গি, মাদক, জলদস্যু এবং সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সফলতা অর্জন করেছে ‘ এই সামাজিক হুমকির বিরুদ্ধে অর্জিত সাফল্যে তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) আহত হয়েছে কি না তা তিনি জানেন না।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি তা বলতে পারব না, তবে বাংলাদেশ জঙ্গি, মাদক, জলদস্যু ও সন্ত্রাসীদের দমনে সাফল্য পেয়েছে এবং এটাই সত্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, দেশের কিছু মানুষ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তারা সবাই অপরাধী, তারা কিছু দোষের জন্য তাদের চাকরি হারিয়েছে বা দেশ ছেড়েছে।’
যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দেয়ায় আমেরিকার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা অবস্থান করছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীকে নাগরিকত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ বারবার তাদের অনুরোধ করছে এবং প্রেসিডেন্ট ও বিচার বিভাগকে চিঠি দিয়েছে যে তারা অপরাধী, খুনি, তারা নারী ও শিশুদের হত্যা করেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, তাদের (যুদ্ধাপরাধী ও খুনিদের) ফেরত পাঠাতে হবে। অপরাধীদের রক্ষা করে তাদের দেশে আশ্রয় দিয়েছে। এবং কিছু র্যাব কর্মকর্তার ওপর কোনো অপরাধ ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বক্তব্য দেন।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ডিসেম্বরে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ও পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, র্যাব ইউনিট-৭ এর সাবেক কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ, র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
সূত্র : ইউএনবি
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।