কম বয়সীরা কম জানবে এটা কিন্তু ঠিক না। এই চিন্তাধারার পরিবর্তন করতে হবে। বরং কম বয়সীরা মাঝে মাঝে আরও অনেক বেশি জানে, পথ দেখিয়ে দিতে পারে। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে তাই আছে। আমরা যদি দেশের উন্নয়ন করতে চাই তাহলে ইয়ুথদের সুযোগ তৈরি করে দেয়া আমাদের সবার দায়িত্ব।
আর এমনটাই দাবি করে কথাগুলো বলেছেন সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ভাইস চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে সিআরআই আয়োজিত প্ল্যানারি লেটস টক অন কোভিড-১৯ রিকোভারি ইয়ুথ ডেভলপমেন্ট শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
এই ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, কী নোটস উপস্থাপন করেন তরুণ সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক। নবনীতা চৌধুরীর সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল সভায় আরও বক্তব্য দেন- শিবু কুমার শীল, নাদিয়া সামদানি, করোবী রাকসান্দ ইশরাত ফারজানা তন্নী, ইজাজ আহমেদ, হাবিবুর রহমানসহ আরও অনেকে।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, সিআরআই এর পক্ষ থেকে যে অনুষ্ঠানগুলো করা হয়, সেখানে সব সময় তরুণদের কথা চিন্তা করা হয়। যেটা সমস্যা মনে করি সেটার সমাধান ও ধারণা দেয়ার চেষ্টা করি। আজকের আলোচনার বিষয় পলিসি ডেভলপমেন্ট, কিন্তু পলিসির পরিবর্তন কোথা থেকে আসবে? আগে দেখতে হবে আমাদের বাধাগুলো কোথায়, আমাদের চ্যালেঞ্জ কী এবং সক্ষমতা কী আছে, আমাদের কী চাহিদা আছে ওটা দেখলে পলিসিটা পরিবর্তন করা যাবে।
তিনি বলেন, এই আলোচনা থেকে আমার অনেক আইডিয়া এসেছে। আশাকরি এখান থেকে তথ্য পাওয়ার পর নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বিশেষ করে উন্নয়নের দিক থেকে, পরিকল্পনার দিক থেকে আস্তে আস্তে মানসিক পরিবর্তন আসবে। আমাদের মানসিক পরিবর্তনটা আগে দরকার। আমাদের দেশের সব থেকে বড় সম্পদ যুব সমাজ। তারা যেন আমাদের দেশের জন্য কাজ করে। আমাদের দেশকে যেন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেভাবেই পরিকল্পনা করতে হবে।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, তরুণরা সৃষ্টিশীল কাজগুলোতে খুব বেশি সুযোগ পাচ্ছে না। সেটা স্বাস্থ্যখাতে হোক, পরিবেশ খাতে হোক, আর শিক্ষাখাতেই হোক, সব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছোট আকারে করছে। এই জিনিসগুলো কীভাবে আরও প্রকাশ্যে আনা যায় ওটাই মূল উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, আমরা যারা বিশেষজ্ঞ বা সিনিয়র তারা এটা নিয়ে চিন্তা করছি না। যাদের ওপর বেশি প্রভাব পড়ে তারা এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করছে। তারা এটা নিয়ে কাজও করছে। আমাদের এই সুযোগগুলো দিতে হবে। কোভিড-১৯ এই মহামারিটা শুধু আমাদের দেশের জন্য না, সব দেশের জন্য সমস্যা। কিন্তু আমাদের যারা তরুণ এটার মধ্যেও থেমে নেই, তারা কাজ করছে। শারীরিকভাবে হয়তো তারা নিরাপদ, কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক, মানসিক এবং শিক্ষা, ভবিষ্যত সবকিছুতে বেশি প্রভাব পড়েছে। তারা হয়তো প্রাণে বেঁচে যাবে, কিন্তু তাদের শিক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের চাকরির সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক যেসব জিনিসগুলো তাদের কাছে উপায় হিসেবে ছিল ওইগুলো শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এর সমাধানে তরুণরাই সুন্দর করে অনেক সমাধান দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তরুণরা আমাদের দেশের ভবিষ্যত। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে ধারায় আছে, আমরা কিসের জন্য যুবকদের লেখাপড়া শেখাচ্ছি, স্কুলে দিচ্ছি। তারা কাজের জন্য প্রস্তুত কিনা? তারা ওখানে কি শিখছে? তারা লেখাপড়া শিখছে না ভ্যালুও শিখছে? কীভাবে দেশের জন্য অবদান রাখবে, কীভাবে কমিউনিটিতে অংশগ্রহণ করবে। তাদের যে পরিবেশ ওটাকে আরও কীভাবে ভালো করবে। তারা চায় কিন্তু তাদের করার পথ আমরা ঠিক করে দেখিয়ে দিতে পারছি না। আমরা যখন পরিকল্পনা করি আমাদের দেখতে হবে কী বাধা আছে, কী সুযোগ আছে, সেগুলো তৈরি করে দিতে হবে।
তবে তরুণদের কাজ করতে কিন্তু আসলেই মানা নাই, বাধা নাই। সব কিছু যে করে দিতে হবে তা কিন্তু না। আমরা কোনো বাধা রেখে দিয়েছি কিনা? আসলে বাধাটা নাই। আমাদের চিন্তাধারার পরিবর্তন করতে হবে, কম বয়সী হলে কম জানবে এটা কিন্তু ঠিক না। কম বয়সীরা আরও অনেক জানে, পথ দেখিয়ে দিতে পারে, আমাদের দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে তাই আছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নিজের কমিউনিটিতে একটা গ্যাপ দেখেছিলেন, তিনি সেখানের ফেলো ছাত্রদের নিয়ে কিছু করার কথা চিন্তা করেছিলেন। সেখান থেকেই তার নেতৃত্ব শুরু। মূলত ইয়ুথ থেকেই শুরু। ওনার নিজের কিছু নৈতিক মূল্যবোধ ছিল, কিছু ড্রাইভ ছিল, ওনি অনেক বাধা মোকাবিলা করেছেন, কিন্তু তারপরেও ওনি সুযোগ তৈরি করে নিয়েছিলেন। কাজেই আমরা যদি চাই দেশের উন্নতি করব, প্রথমে আমাদের ইয়ুথদের সুযোগ তৈরি করে দেয়া উচিত। আমাদের সবার জন্য এটা একটা দায়িত্ব।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।