স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সেই ঐতিহাসিক ভাষণের সঙ্গে সঙ্গে কালের সাক্ষী হয়েছে মাইক্রোফোন ও মাইক সরবরাহকারী ‘কল রেডী’ নামক প্রতিষ্ঠান। কারণ তাদেরই সরবরাহ সরঞ্জামের মাধ্যমে লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বজ্র কণ্ঠ। আর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের আগে রাতের আঁধারে পাকিস্তানি বাহিনীর নজর এড়িয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মঞ্চের আশেপাশে বসানো হয়েছিল অন্তত ২০টি শক্তিশালী মাইক।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের সভা-সমাবেশে কল-রেডী ছিল অন্যতম অংশীদার। অর্থাৎ দেশের নানা সংগ্রামের সাক্ষী ছিল এই প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সূত্রাপুরে ‘আরজু লাইট হাউস’ নামে একটি দোকান চালু করেন হরিপদ ঘোষ ও দয়াল ঘোষ নামে দুই ভাই। প্রতিষ্ঠার শুরুতে তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গ্রামোফোন ভাড়া ও আলোকসজ্জার কাজ করতেন। প্রথমদিকে ভারত থেকে কয়েকটি মাইক আমদানি করে এবং তারা নিজেরা কিছু হ্যান্ডমাইক তৈরি করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সভা-সমাবেশে ভাড়া দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চীন, তাইওয়ান ও জাপানসহ অন্যান্য দেশ থেকেও মাইক আমদানি করেন তারা।
বর্তমানে হরিপদ ঘোষ ও দয়াল ঘোষের দুই সন্তান বিশ্বনাথ ঘোষ এবং ত্রিনাথ ঘোষ এর কর্ণধার। বিশ্বনাথ ঘোষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৭ মার্চের আগে তার বাবাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সারা শহরে মাইক বসানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী শহরের বিভিন্ন প্রান্তে তিন শতাধিক মাইক লাগানো হয়েছিল, যাতে লাখো মানুষের কাছে ভাষণ পৌঁছানো যায়। সেই সময় ঢাকা শহরে এতগুলো মাইক লাগানো ঝুঁকিপূর্ণ ছিল বলে জানান তিনি।
