
জার্মান তরুণী আলিসা থেওডোরাকে বিয়ে করে বরিশালের গ্রামের বাড়ি নিয়ে এসেছেন রাকিব হাসান শুভ (২৬)। ২০১২ সাল থেকে রাকিব জার্মানির একটি কোম্পানিতে চাকরি করছেন। জার্মানিতে একই এলাকায় বসবাসের কারণে ৪-৫ বছর আগে আলিসার সঙ্গে পরিচয় হয় রাকিব হাসানের। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক গভীর হয়। একপর্যায়ে রাকিব ও আলিসা একে অপরের প্রেমে পড়েন।
জানা যায়, রাকিব হাসান শুভ বরিশাল সদর উপজেলার নগরী লাগোয়া চরবাড়িয়া ইউনিয়নের উলাল বাটনা গ্রামের শহীদুল ইসলাম ওরফে ইতালি শহীদের একমাত্র ছেলে। শহীদুল ইসলাম চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।
পবিত্র শবে বরাত আগামী ১৮ মার্চ শুক্রবার
শহীদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ২০২০ সালের ১৫ মার্চ রাকিব ও আলিসা ভালোবেসে বিয়ে করে। বিয়েতে আমাদের এবং আলিসার পরিবারের সম্মতি ছিল। তবে বিয়েতে বরপক্ষের হয়ে শুধু আমি যেতে পেরেছি। কিন্ত কনে পক্ষের অভিভাবক ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। আলিসা ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছে।

বিয়ের পর থেকে পুত্রবধূকে দেখার জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিলেন রাকিব হাসানের মা নাসরিন জাহান মুন্নী। আবার রাকিবের একমাত্র বোন সাদিয়া ইসলাম যুথিও পরদেশি ভাবীকে দেখার জন্য ছিলেন ব্যাকুল। বাড়িতে আসার অধীর অপেক্ষার মধ্যে রাকিব-আলিসার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে ছেলেসন্তান। ছেলের বয়স এখন ৬ মাস। নাম ইলিয়াস হাসান ইভান।
রাকিব হাসান বলেন, বিয়ের পর ইচ্ছে ছিল অল্পদিনের মধ্যেই নববধূকে নিয়ে বরিশালের গ্রামের বাড়িতে আসার। জার্মানিতে তেমন কোনো অনুষ্ঠান করতে পারিনি। তাই মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম বরিশালের বাড়িতে ফিরে আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিমন্ত্রণ করে বড় অনুষ্ঠান করব।

কিন্ত মহামারি করোনার কারণে বিয়ের পর দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এতে আমার কখনও কখনও খুব মন খারাপ হতো। অপেক্ষায় ছিলাম কবে করোনার দুঃসহ দিন কেটে স্বাভাবিক সময় আসবে আর কবে নববধূকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাব। আমাদের সঙ্গে আলিসার বান্ধবী লাইসাও এসেছে বলে জানান তিনি।
রাকিবের বাবা শহীদুল ইসলাম বলেন, শনিবার বেলা পৌনে ১২টায় হেলিকপ্টারে করে বরিশালের গ্রামের বাড়িতে আসে রাকিব, স্ত্রী আলিসা, নাতি ইভান এবং আলিসার বান্ধবী লাইসা। তারা বাড়ি আসায় আমাদের প্রায় দুই বছরের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। শনিবার সকালে জার্মান থেকে রাকিব আলিসা, ছেলে ও লাইসাকে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছায়।

রাকিবের মা নাসরিন জাহান মুন্নী সমকালকে বলেন, ‘আমি খুব খুশি। আমার ছেলের বউ ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারে। আমাকে জিজ্ঞেস করে মা তুমি কেমন আছ? নাতি ইভানকে কোলে নিলে বুকটা জুরিয়ে যায়।’ রাকিবের একমাত্র বোন সাদিয়া ইসলাম যুথি বলেন, ‘আমার খুব আনন্দ লাগছে। ভাবী অনেক মিশুক। আমাকে যুথি বলে নাম ধরে ডাকে’।
শহীদুল ইসলাম জানান, জার্মানিতে আমাদের রেওয়াজ অনুযায়ী বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠান করা হয়নি। তাই আবার সব আয়োজন করেছি। ৯ মার্চ হবে ওদের গায়েহলুদ। ১১ মার্চ আয়োজন করা হবে বউভাত অনুষ্ঠানের। আড়াই হাজার মানুষকে দাওয়াত করব।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম বলেন, রাকিব ও তার পরদেশি বউকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি স্থানীয় কাগাশুরা বাজারসংলগ্ন মাঠে অবতরণ করলে তাদের বরণ নেন রাকিবের বাবা-মা ও স্বজনরা। মা-বাবা ছেলে ও ছেলের বউকে জড়িয়ে ধরেন। নাতিকে কোলে নিয়ে আদর করেন।
রাকিব হেলিকপ্টারে করে বউ নিয়ে আসছে এই খবর আগেই এলাকাবাসী জেনেছিল। এজন্য কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন কাগাশুরা বাজারসংলগ্ন মাঠে। হেলিকপ্টার থেকে নামার পর ঘোড়ার গাড়িতে করে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

রাকিবের বাবা শহীদুল ইসলাম বলেন, ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি আসায় শনিবার দুপুরেই ৮০০ মানুষকে খিচুরি ও মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করেছি। রোববার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুই হাজার মানুষকে মিষ্টিমুখ করেছি। ২০১১ সালে তিনি ছেলে রাকিবকে নিয়ে ইতালি যান। পরবর্তীতে ইতালি থেকে রাকিব চলে যায় জার্মানিতে। সেখানে আলিসা থেওডোরার সঙ্গে রাকিবের পরিচয় হয়।
তিনি আরও বলেন, আলিসা পেশায় একজন নার্স। আলিসার সঙ্গে প্রেম হওয়ার পর রাকিব তাকে বিয়ে করার জন্য আমাদের সম্মতি চেয়েছিল। ভিডিও কলে আলিসাকে দেখে আমরা সম্মতি দিয়েছি। আলিসারের পরিবারেরও এ বিয়েতে সম্মতি ছিল।
রাকিব হাসান শুভ বলেন, বাড়ি আসতে পেরে আমার অনেক দিনের আশা পূরণ হয়েছে। আমাদের পেয়ে বাবা-মা ও বোন আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। আলিসা এই প্রথম বাংলাদেশে এসেছে। এখানকার সবুজ প্রকৃতি ও মানুষের আতিথেয়তা আলিসার ভালো লাগছে বলে সে জানিয়েছে।