দিনাজপুরে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামির ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ শনিবার সন্ধ্যায় এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন দিনাজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শিশির কুমার বসু।
রিমান্ডের আদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ঘোড়াঘাট উপজেলার সাগরপুর এলাকার মৃত ফরাজ উদ্দিনের ছেলে রং মিস্ত্রি নবীরুল ইসলাম (৩৪) এবং একই উপজেলার চক বাবুনিয়া বিশ্বনাথপুরের খোকা চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে সান্টু মিয়া (২৮)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দিনাজপুরের কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নবীরুল ও সান্টুকে দিনাজপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদলতে (ঘোড়াঘাট আমলি আদালত-৭) হাজির করা হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের দুজনের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। আদালতের বিচারক প্রত্যেকের ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে দুপুরে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনায় তার ভাই শেখ ফরিদের দায়ের করা মামলাটি ঘোড়াঘাট থানা পুলিশের কাছ দিনাজপুর ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঘটনার পর থেকে মামলাটির তদন্ত করছিলেন ঘোড়াঘাট থানার পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মোমিনুল ইসলাম। এখন থেকে মামলাটি তদন্ত করবেন ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাম জাফর।
ওসি ইমাম জাফর জানান, মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর। তাই অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ মামলায় গ্রেপ্তাকৃত অপর আসামি ঘোড়াঘাট উপজেলার সাগরপুর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আসাদুল হক (৩৫) অসুস্থ হওয়ায় আজ তাকে এখনো ডিবি পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি। আসাদুলকে তাদের হাতে হস্তান্তর করা হলে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
গত বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের সরকারি বাসভবনে ছিলেন। দুর্বৃত্তরা ভেন্টিলেটর দিয়ে বাসভবনে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওয়াহিদা ও তার বাবাকে উপর্যুপরি আঘাত করে। পরে দুর্বৃত্তরা তাদের সেখানে মুমূর্ষু অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় ওয়াহিদা ও তার বাবাকে উদ্ধার করে প্রথমে রমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ওয়াহিদা খানমকে নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। তার বাবা ওমর আলী বর্তমানে রমেক হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ঘোড়াঘাট থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন আহত ওয়াহিদার ভাই শেখ ফরিদ। পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৩ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। চুরিতে বাধা দেওয়ায় ইউএনও ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় বলে জানিয়েছে তারা।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।