ওপেনার লিটন দাসের সেঞ্চুরি ও মিডল-অর্ডার ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের হাফ-সেঞ্চুরিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ।
আজ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ৮৮ রানে হারিয়েছে আফগানিস্তানকে। সিরিজ জয়ের পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে এগিয়েও গেল বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডে ৪ উইকেটে জিতেছিলো টাইগাররা।
এই নিয়ে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে ২৯তম দ্বিপাক্ষীক সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। অএ ছাড়া দ্বিতীয়বারের মত আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতলো টাইগাররা।
সিরিজটি বিশ^কাপ সুপার লিগের অংশ হওয়ায়, ১৪ ম্যাচ শেষে ১০ জয় ও ৪ হারে ১০০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠলো বাংলাদেশ। ১৫ ম্যাচে ৯৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে নেমে গেল ইংল্যান্ড। আর ৮ খেলায় ৬ জয় ও ২ হারে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সপ্তমস্থানে আফগানিস্তান।
প্রথমে ব্যাট করে লিটনের ১৩৬ ও মুশফিকের ৮৬ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩০৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ২১৮ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সতীর্থ লিটন দাসকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন তামিম।
৬ ওভারের মধ্যে তামিম ২টি ও লিটন ৩টি চার মারেন। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন আগের ম্যাচে শুরুতেই প্রতিপক্ষকে মহাবিপদে ফেলে দেয়া আফগানিস্তানের পেসার ফজলহক ফারুকি। তার বলে লেগ বিফোর আউট হন তামিম। রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচাতে পারেননি তামিম। ২৪ বলে ১২ রান করেন টাইগার দলনেতা।
তামিমের বিদায়ে উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। প্রথম বলে বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুলেন সাকিব। তবে এবারও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন সাকিব। আফগানিস্তানের স্পিনার রশিদ খানের বলে এলবিডব্লু আউট হন সাকিব। রিভিউ নিয়ে আউট হওয়ার আগে ২টি চারে ৩৬ বলে ২০ রান করেন সাকিব।
৮৩ রানে দুই উইকেট পতনের পর বাংলাদেশের হাল ধরেন লিটন ও মুশফিকুর রহিম। উইকেটে সেট হতে সময় নেন মুশফিক। তবে ২০তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ১শতে পৌঁছে দেন মুশফিক-লিটন। ২৫তম ওভারে বাউন্ডারি দিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন। ৬৫ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পাবার পর নিজের ইনিংস বড় করেছেন লিটন।
অপরপ্রান্তে রানের গতি ধরে রেখেছেন মুশফিক। ৩৪তম ওভারে রশিদের বলে বাউন্ডারি মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪২তম হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন মুশফিক। ৫৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করেন তিনি।
লিটন-মুশফিকের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩৬তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ২শতে পৌঁছায়। ৪১তম ওভারের চতুর্থ বলে কভার দিয়ে বাউন্ডারি আদায় করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯তম ম্যাচে পঞ্চম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন লিটন। ১০৭ বলে সেঞ্চুরির পর ৪৪তম ওভারে ফারুকির প্রথম দুই ডেলিভারিতে ১০ রান তুলেন লিটন। ৪৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলেও ফারুকিকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন লিটন। ঐ ওভারে লিটন-মুশফিকের জুটি ২শ স্পর্শ করে। দু’জনের ১৮৮ বল খেলেন। তবে ৪৭তম ওভারে পেসার ফরিদ আহমাদের করা দ্বিতীয় বলে লিটন ও তৃতীয় বলে মুশফিক আউট হন।
১২৬ বল খেলে ১৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৩৬ রান করেন লিটন। ৯৩ বলে ৯টি চারে ৮৬ রান করেন একবার জীবন পাওয়া মুশফিক। ৬৯ রানে জীবন পেয়েছিলেন তিনি।
তৃতীয় উইকেটে ১৮৬ বলে ২০২ রানের জুটি গড়েন লিটন-মুশফিক। তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগেরটি ছিলো তামিম-মুশফিকের। ২০১৫ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে ১৭৮ রান করেছিলেন তারা।
দলীয় ২৮৫ রানেই বিদায় নেন লিটন-মুশফিক। তখন ইনিংসের ২১ বল বাকী ছিলো। বাকী ২১ বলে ২১ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও আগের ম্যাচের হিরো আফিফ হোসেন। মাহমুদুল্লাহ ৬ ও আফিফ ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন। এতে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩০৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। অতিরিক্ত থেকেও ৩৩ রান পায় বাংলাদেশে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান বাংলাদেশের। ২১তমবারের মত ওয়ানডেতে ৩শ রান করলো বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের ফরিদ ৫৬ রানে ২ উইকেট নেন।
সিরিজে সমতা ফেরাতে ৩০৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমেশুরুটা ভালো করতে পারেনি সফরকারী আফগানিস্তান। ১০ ওভারের মধ্যে ৩৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রান আউট হন ওপেনার রিয়াজ হাসান(১)।
চতুর্থ ওভারে উইকেট শরিফুলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক ৫ রান করা হাসমতুল্লাহ শাহিদি।
ইনিংসের দশম ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে ৯ রান করা আজমতুল্লাহ ওমারজাইকে বিদায় করেন সাকিব। তবে শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার চেষ্টা করেছেন আরেক ওপেনার রহমত শাহ ও মিডল-অর্ডার ব্যাটার নাজিবুল্লাহ জাদরান।
রহমত-নাজিবুল্লাহর ব্যাটিং দৃঢ়তা শতরানে ২০তম ওভারে শতরান পায় আফগানিস্তান।
২৪তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৮তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন রহমত। পরের ওভারে রহমতকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রু এনে পেসার তাসকিন আহমেদ। ৪টি চারে ৭১ বলে ৫২ রান করেন রহমত। নাজিবুল্লাহর সাথে ৯০ বলে ৮৯ রানের জুটি গড়েন তিনি।
রহমতের আউটের পর ১১ রানের ব্যবধানে আরও ২ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে আফগানিস্তান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া নাজিবুল্লাহকে আউট করেন তাসকিন। ৬১ বলে ৭টি চারে ৫৪ রান করেন নাজিবুল্লাহ। অন্যপ্রান্ত দিয়ে আফগানদের উইকেটরক্ষক রহমানউল্লাহ গুরবাজকে বিদায় দেন সাকিব। ৭ রান করে সাকিবের বলে বোল্ড হন তিনি।
এরপর দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন মোহাম্মদ নবি ও রশিদ খান। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুললেও, বড় জুটি গড়তে পারেননি নবি -রশিদ। ৩৬ বলে ৩৩ রান করেন তারা। নবিকে ব্যক্তিগত ৩২ রানে আউট করেন আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মেহেদি হাসান মিরাজ। আর রশিদকে বোল্ড করে বাংলাদেশের জয়ের পথ আরো সহজ করে ফেলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ২৯ রান করেন রশিদ।
শেষ পর্যন্ত ২৯ বল বাকী থাকতে ২১৮ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের তাসকিন-সাকিব ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন মুস্তাফিজ-শরিফুল-মিরাজ-মাহমুদুল্লাহ ও আফিফ। ম্যাচ সেরা হন লিটন।
আগামী ২৮ মার্চ চট্টগ্রামেই হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।
স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল এলবিডব্লু ব ফারুকি ১২
লিটন দাস ক মুজিব ব ফরিদ ১৩৬
সাকিব আল হাসান এলবিডব্লু ব রশিদ ২০
মুশফিকুর রহিম ক ফারুকি ব ফরিদ ৮৬
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ৬
আফিফ হোসেন অপরাজিত ১৩
অতিরিক্ত (বা-৪, লে বা-১১, ও-১৮) ৩৩
মোট (৪ উইকেট, ৫০ ওভার) ৩০৬
উইকেট পতন : ১/৩৮ (তামিম), ২/৮৩ (সাকিব), ৩/২৮৫ (লিটন), ৪/২৮৫ (মুশফিকুর)।
আফগানিস্তান বোলিং :
ফজলহক ফারুকি : ১০-১-৫৯-১ (ও-১),
ফরিদ আহমাদ : ৮-০-৫৬-২ (ও-৫),
মুজিব উর রহমান : ১০-০-৪৯-০ (ও-৩),
আজতুল্লাহ ওমারজাই : ৭-০-৩৭-০ (ও-৪),
রশিদ খান : ১০-০-৫৪-১,
মোহাম্মদ নবি : ৪-০-২৬-০ (ও-১),
রহমত শাহ : ১-০-১০-০।
আফগানিস্তান ইনিংস :
রহমত শাহ বোল্ড ব তাসকিন ৫২
রিয়াজ হাসান রান আউট (আফিফ হোসেন) ১
হাসমতুল্লাহ শাহিদি ক মুশফিক ব শরিফুল ৫
আজমতুল্লাহ ওমারজাই স্টাম্প মুশফিক ব সাকিব ৯
নাজিবুল্লাহ জাদরান ক মুশফিক ব তাসকিন ৫৪
মোহাম্মদ নবি ক আফিফ ব মিরাজ ২০
রহমানুল্লাহ গুরবাজ বোল্ড ব সাকিব ৭
রশিদ খান বোল্ড ব মুস্তাফিজ ২৯
মুজিব উর রহমান ক জয় (অতিরিক্ত) ব মাহমুদুল্লাহ ৮
ফরিদ আহমাদ অপরাজিত ৬
ফজলহক ফারুকি বোল্ড ব আফিফ ০
অতিরিক্ত (লে বা-৭, নো-১, ও-৭) ১৫
মোট (অলআউট, ৪৫.১ ওভার) ২১৮
উইকেট পতন : ১/৯ (রিয়াজ), ২/১৬ (শাহিদি), ৩/৩৪ (ওমারজাই), ৪/১২৩ (রহমত), ৫/১৪০ (নাজিবুল্লাহ), ৬/১৫১ (গুরবাজ), ৭/১৮৪ (নবি), ৮/২০৫ (রশিদ), ৯/২১৮ (মুজিব), ১০/২১৮ (ফারুকি)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মুস্তাফিজুর রহমান : ৮-০-৫৩-১ (ও-৩, নো-১),
শরিফুল ইসলাম : ৭-০-৪৪-১,
তাসকিন আহমেদ : ১০-২-৩১-২,
সাকিব আল হাসান : ৯-০-২৯-২,
মেহেদি হাসান মিরাজ : ১০-০-৫২-১ (ও-১),
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ : ১-০-২-১ (ও-১),
আফিফ হোসেন : ০.১-০-০-১।
ফল : বাংলাদেশ ৮৮ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : লিটন দাস (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।
https://dainikshomayershangbad.com
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।