ঐতিহ্যবাহী ঝালকাঠি নেছারাবাদ দরবার শরীফের ০২দিনব্যাপী বার্ষিক ঈসালে-সওয়াব ওয়াজ-মাহফিলের আজ আখেরী মুনাজাত। দেশের ৬৪ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১ম দিনের (২৩শে ফেব্রুয়ারি) আগেই এসে উপস্থিত হন হাজার-হাজার ভক্ত-আশেকান। প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও এবারের মাহফিলে কয়েকলক্ষ লােকের সমাবেশ ঘটেছে।
গতকালও (২৩শে ফেব্রুয়ারি) ১ম দিনের মতাে ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসা ও দারুল কায়েদ তাহলী মাদরাসার মুহাদ্দেস, মুফাসূসের, মুফতীবৃন্দ ও কতিপয় সুযােগ্য ছাত্র কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক গভীর পাণ্ডিত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বক্তা ও পীরসাহেবান তাদের মূল্যবান ওয়াজ-নসীহত পেশ করেন।
মাহফিলের সভাপতি আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর তাঁর ভাষণে শতধা-বিচ্ছিন্ন মুসলমানদের ঐক্য-সংহতির ওপর জোর তাগিদ দেন এবং বিচ্ছিন্ন-ভূইফোড় কিতাব-সর্বস্ব নেসবতহীন ধর্মবেত্তা-আলেমদের ফেতনা থেকে সকলকে সাবধান থাকার আহ্বান জানান।
হযরত নেছারাবাদী হুজুর বলেন-“ইসলাম একটি গণমুখী আন্দোলন-যা মানুষকে আল্লাহওয়ালা সমাজকেন্দ্রিক হিসেবে গড়ে তুলতে রসূলে করীম স. থেকে সাহাবায়ে কেরাম হয়ে তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, সলফেসালেহীনআওলিয়ায়ে কেরাম পরম্পরায় আমাদের কাছে এসেছে। যারাই এই নেসবত, এই ধারাবাহিকতা ক্ষুন্ন করে ইসলাম বুঝতে চেয়েছে, তারাই উগ্রতার অনল জ্বালিয়ে কওম ও মিল্লাতের ক্ষতি করেছে এবং এখনাে করে যাচ্ছে। দল-মতছেলছেলা-তরীকা-মযহাবের নামে মুসলমানদের বিভক্তি এই উগ্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গােষ্ঠীকে আরাে ত্বরান্বিত করছেকলেমায় বিশ্বাসী কোন মুসলমানের কাম্য হতে পারে না।’
নেছারাবাদী হুজুর বলেন-“আমাদের মনে রাখতে হবে, সব ফরযের প্রধান ফরয ঐক্যবদ্ধ থাকা। অনৈক্য ও নেসবতহীনতাই মুসলমানদের সমূহ বিপর্যয়ের কারণ। হাদীয়ে যামান, মুজাদ্দেদে মিল্লাত হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ, মুসলিমবিশ্বের সামনে ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফ (মতানৈক্যসহ ঐক্য)-নীতির যে যুগান্তকারী দর্শন পেশ করে গেছেন-তার বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী। এযুগ মাহদী আলাইহিস্সালামের যুগ, কোন বিচ্ছিন্ন ধর্মবেত্তার পথ নয়, আমাদেরকে অগ্রসর হতে হবে আওলিয়ায়ে কেরামের পথেই; অন্যথায় অপেক্ষা করছে ঈমান হারানাে মতে ভয়ঙ্কর পরিণতি! | মাহফিলের সার্বিক ব্যবস্থাপনা চোখে পড়ার মতাে। ওয়াজ-নসীহতের পাশাপাশি উপস্থিত মুসল্লীদের আমলী জীবন গঠনের জন্য কয়েক হাজার মুয়াল্লেম বাস্তব প্রশিক্ষণসহ নানানরকম তা’লীম-তরবিয়ত দিচ্ছেন। এছাড়াও আগত মেহমানদের থাকা-খাওয়া, পয়ঃনিস্কাষণ ও সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থাসহ নিয়ােজিত রয়েছে ০২টি মেডিক্যাল টিম ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ১০সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক। আজ (২৪শে ফেব্রুয়ারি) বাদ-ফজর হযরত নেছারাবাদী হুজুরের সমাপনী ভাষণ ও আখেরী মুনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে দক্ষিণবাংলার এ ঐতিহ্যবাহী মাহফিল।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।