রুশপন্থী বিদ্রোহী অধ্যুষিত পূর্ব ইউক্রেনে এক সেনা নিহত হওয়া, রাশিয়ার পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা, ইউক্রেনে রুশ হামলার ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নতুন সতর্কবার্তা—সব মিলিয়ে ইউক্রেন ইস্যুতে উত্তেজনা কমার পরিবর্তে কেবলই বাড়ছে।
পশ্চিমের সঙ্গে বিতণ্ডার মধ্যে গতকাল শনিবার নিজেদের সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া দিয়েছে রাশিয়া। ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ছিল পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। মহড়ার সময় সব ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যে আঘাত করতে পেরেছে বলে ক্রেমলিনের দাবি।
রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে কিছু সেনা সরানোর ঘোষণা দেওয়ার পর গত শুক্রবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বেড়ে যায়। ওই অঞ্চলে বাড়ে গোলাবর্ষণের ঘটনা। ইউক্রেনের এক সেনার মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। দেশটির সামরিক বাহিনী জানায়, গতকাল সকালে ওই সেনা মারা যান।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী নিজেদের ফেসবুক পেজে আরো জানায়, দিনের শুরু থেকে ১৯ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা, আর এর আগের ২৪ ঘণ্টায় লঙ্ঘন করেছে ৬৬ বার। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে ২০টির বেশি বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে বলেও দাবি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর।
আট বছরের দীর্ঘ সংঘাতের অবসান ঘটাতে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে মিনস্ক চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি সত্ত্বেও গত বৃহস্পতিবার থেকে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য সরকার ও বিদ্রোহী পরস্পরকে দুষছে। কিয়েভ পূর্ব ইউক্রেনে অভিযান শুরু করতে পারে, রাশিয়ার এমন দাবিও ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে। এসব বিতণ্ডার মধ্যে গতকাল নিজেদের সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া দিল রাশিয়া।
এদিকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পূর্ণ সামরিক প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল দোনেত্স্ক পিপলস রিপাবলিকের (ডিপিআর) প্রধান ডেনিস পুশিলিন এক ভিডিও বার্তায় বলেন, তিনি সামরিক প্রস্তুতির একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং যারাই ‘হাতে অস্ত্র নিতে সক্ষম’, তাদের সামরিক দপ্তরে ডাকা হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর আরেক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা লিওনিড পাসেচনিকও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের ক্ষেত্রে একই রকম এক ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেন।
আগের দিন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা ইউক্রেন বাহিনীর হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়ে তাঁদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা থেকে প্রায় সাত লাখ লোককে রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান। গতকাল সকাল পর্যন্ত দোনেত্স্ক থেকে প্রায় সাত হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় জরুরি মন্ত্রণালয়। ওই এলাকার মানুষ রাশিয়ায় যেতে শুরু করায় ওই সীমান্তসংলগ্ন রুশ এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মন্তব্য করেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে ইউক্রেনে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা তিনি নিশ্চিত। হোয়াইট হাউস থেকে এক টেলিভিশন বার্তায় তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি নিশ্চিত, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ’ তাঁর দাবি, আগামী সপ্তাহে বা কয়েক দিনের মধ্যে হামলা চালানো হবে। যেসব জায়গায় হামলা করা হবে, সেগুলোর মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভও আছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে ‘উত্তেজনা কমানো এবং আলোচনার টেবিলে ফেরার সময়’ এখনো আছে, এমন মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
উত্তরোত্তর উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে গতকাল জার্মানির মিউনিখে যান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ, যুক্তরাজ্যের প্রেসিডেন্ট বরিস জনসন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন।
মিউনিখের নিরাপত্তা সম্মেলনে কমলা হ্যারিস হুঁশিয়ারি দেন, ইউক্রেনে হামলা চালালে রাশিয়াকে পশ্চিমাদের মারাত্মক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে এবং সেটা করা হবে দ্রুত।
এ ছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেন, রাশিয়া অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষতির শিকার হবে।
সূত্র : এএফপি, বিবিসি
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।