চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরে গ্রামের সালিসে ধর্ষণের বিচার না পেয়ে সামিয়া খাতুন সাম্মি নামের এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাম্মি রহনপুর ইউনিয়নের মিরাপুর তিনপুকুর গ্রামের সাদিকুল ইসলামের মেয়ে ও রহনপুর রাবেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণি শিক্ষার্থী ছিল।
জানা যায়, ধর্ষণের ঘটনায় গ্রাম্য সালিস বসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তবে ভুক্তভোগী সেই টাকা না নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। পুরো ঘটনায় পুলিশের কোনো ধরনের ভূমিকা ছিল না বলে অভিযোগ নিহত সাম্মির নানি মার্জিনা বেগমের।
সামিয়া খাতুন সাম্মির নানি মার্জিনা ও নানা তিনকড়ি জানান, মরার আগে সাম্মি বলেছিল ‘আমি টাকা চাই না। ছেলেকে চাই। টাকা নিয়ে তোমরা মীমাংসা কোরো না। আমি নয়নকে বিয়ে করব।’ সাম্মির নানি মার্জিনা বলেন, ধর্ষণের বিচার না পেয়েই মার্জিনা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
সালিস বসে ৩০ আগস্ট রবিবার সন্ধ্যায়। সাম্মি মারা যায় ১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে। সাম্মির নানি মার্জিনা অভিযোগ করে বলেন, গত ৭ আগস্ট সাম্মিকে তুলে নিয়ে যায় নয়ন। তার পরের দিন সে ফেরত আসে। বিষয়টি থানায় জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফি আনসারী মীমাংসার কথা জানায়। তবে আমি (সাম্মির নানি) মীমাংসায় বসতে চাইনি। আইনের মাধ্যমে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এক এসআইসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফি আনসারী বসে মীমাংসার কথা বলে ৩০ আগস্ট সালিস করে।
তিনি জানান, গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় মীমাংসার সময় চেয়ারম্যান শফি আনসারীর নেতৃত্বে দুই ইউপি সদস্য বাবর আলী ও মনিরুল ইসলাম মনির উপস্থিত ছিলেন। সালিসে বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসা করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও দুই সদস্য। এ সময় ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ছেলেকে।
তবে সাম্মি বিষয়টি মেনে না নিয়ে বিয়ের দাবি জানায়। জানা গেছে, রহনপুর ইউনিয়নের মিরাপুর তিনপুকুর গ্রামের সাদিকুল ইসলামের মেয়ে ও রহনপুর রাবেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর প্রতিবেশী কেতবুলের ছেলে নয়নের (১৮) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি ছেলের পরিবার মেনে না নিয়ে প্রায় তিন মাস আগে নয়নকে অন্যত্র বিয়ে দেয়। বিয়ের পরও ওই ছেলে তার সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে আসছিল। এর ধারাবাহিকতায় গত ৭ আগস্ট তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরদিন গত ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় ছেলের পরিবারের লোকজন তাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে উদ্ধার করে এলাকায় নিয়ে আসে। পরে ওই স্কুলছাত্রী সাম্মিকে নয়নের পরিবারের লোকজন মারধর করে বাড়ি থাকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। মারধরে গুরুত্বর আহত ওই স্কুলছাত্রীকে স্থানীয়দের সহায়তায় রহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
পরদিন এ ঘটনায় ওই স্কুলছাত্রীর নানা তিনকড়ি গোমস্তাপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এ ব্যাপারে পুলিশ কোনো ভূমিকা না নেওয়ায় স্থানীয় রহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফি আনসারীর নেতৃত্বে দুই ইউপি সদস্য বাবর আলী ও মনিরুল ইসলাম মনিরের উপস্থিতিতে গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় ওই এলাকায় একটি সালিস অনুষ্ঠিত হয়। সালিসে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানার বিষয়টি মেনে নেওয়া হয়নি। এর এক দিন পর সাম্মি আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় গোমস্তাপুর থানায় একটি ইউডি মামলা (নং-১৩) হয় ১ সেপ্টেম্বর। এ ঘটনার পর নয়নের পরিবার এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করে।
ওই স্কুলছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউডি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মোতাহার আলী জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। মোতাহার আলী আরো জানান, কোথাও সালিস হয়েছিল কি না জানা নেই, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
রহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফি আনসারী জানান, সামাজিকভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সালিস হয়েছিল। তবে জরিমানা কাউকে করা হয়নি। পালিয়ে গিয়ে ছেলের ধর্ষণের কথা ওই কিশোরীকে কৌশলে জিজ্ঞেস করা হলে শারীরিক সম্পর্ক না হওয়ার কথা জানিয়েছিল।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।