যাত্রাবাড়ীর মোড়ে রিকশা ভ্যান থেকে কলা কিনছেন সাব্বির। পেশায় রিকশাচালক সাব্বির প্রতিদিনই এই ভ্যান থেকে কলা কেনেন। বাসায় শিশু সন্তান আছে, তার জন্য প্রতিরাতেই কলা কিনে নিয়ে যান। থাকেন কাজলায়। সাব্বির জানালেন, বাসার আশপাশ দিয়ে কলা কিনতে গেলে হালি রাখে ১৫-২০ টাকা। আর যাত্রাবাড়ীর ভ্যান থেকে কলা কিনলে ওর চেয়ে একটু ছোট আকৃতির কলা ডজন পাওয়া যায় ১৫ টাকায়।
ঠিক ওর পাশেই টুকরিতে করে বিক্রি হচ্ছে শাকসবজি। সেখানেও মানুষের ভিড়। নেয়ামত নামের একজন জানালেন, পাশেই কয়েকটি সবজির দোকান রয়েছে। ওই দোকানে যে সবজি বিক্রি হয় ৮০ টাকা কেজি; ঠিক পাশেই ফুটপাথে সেই একই মানের সবজি বিক্রি হয় ৫০-৬০ টাকায়। যে কারণে মানুষ ফুটপাথের ওই দোকানগুলোতেই ভিড় জমায়।
বাতেন নামের এক ব্যক্তি জানালেন, মানুষ এখন কম মূল্যের বাজার খোঁজে। কোথায় নিত্যপণ্য কম দামে বিক্রি হয় কষ্ট করে হলেও সেখানে গিয়ে ভিড় জমায় মানুষ। রাজধানীর মানিকনগর এলাকার সিদ্দিকুর রহমান নামের এক সবজি বিক্রেতা নয়া দিগন্তকে বলেন, আগে যে মানুষ দিনে কমপক্ষে এক কেজি করে সবজি কিনতেন; এখন তিনি আধা কেজি কিনছেন। সিদ্দিকুর বলেন, মানুষ এখন খোঁজে কোথায় কম দামে নিত্যপণ্য বিক্রি হয়। প্রয়োজনে দুই কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে ওই বাজার থেকে পণ্য কেনেন মানুষ। সিদ্দিকুর বলেন, আগে যেসব মানুষ মানিকনগর বাজার থেকে পণ্য কিনত, সেই মানুষই এখন গোলাপবাগ মাঠের কোনায় যান কম মূল্যে পণ্য কিনতে। যাত্রাবাড়ীর আড়ত থেকে কিছুটা নিম্নমানের ওই পণ্যে দাম কিছুটা কম। গোলাপবাগের ওই বাজারে গিয়ে দেখা যায় ওটা স্থায়ী কোনো বাজার নয়। এখানে সবধরনের নিত্যপণ্যই রয়েছে। বিশেষ করে মাছ-গোশত, শাকসবজি, চাল-ডাল সবই মিলছে অস্থায়ী এই বাজারে। সকাল ৮টার দিকে বাজার শুরু হয়, আর ১১টার দিকে কেনাবেচা শেষ। এই বাজারের এক ক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আশপাশের বাজারগুলোর চেয়ে কেজিতে অন্তত ১০ টাকা কমে এখানে সবজি মিলছে। এনামুল নামের এক বিক্রেতা বলেন, যাত্রাবাড়ী বাজার থেকে পণ্য আসে বলে তাদের রাস্তায় তেমন খরচ নেই। আর এখানে ভালো মানের যেভাবে পণ্য আছে, একটু নিম্নমানের পণ্যও এখানে বিক্রি হয়। যে কারণে মানুষ কম দামে পণ্য পাচ্ছে। ওই বিক্রেতা বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে এই বাজারে অনেক মানুষ আসে সকাল সকাল।
কম দামে পণ্য কেনার জন্য টিসিবির ট্রাকেও মানুষের ভিড় দিন দিন বাড়ছে। টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৬৫ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১০ টাকা এবং পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকায় কিনতে পারছেন। একজন ক্রেতা সর্বনিম্ন দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি ও দুই লিটার তেল কিনতে পারছেন। ক্রেতারা জানিয়েছেন, তারা মূলত তেল, ডাল ও চিনির জন্যই লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। সাইদুর রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, দুই লিটার সয়াবিন তেল দোকানে বিক্রি হয় ৩৩৫ টাকায়। আর টিসিবির ট্রাক থেকে কিনতে পারছেন ২২০ টাকায়। ট্রাক থেকে দুই লিটার তেল কিনে প্রায় এক লিটারের মূল্য বাঁচানো যায়। যে কারণে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইন দিয়ে পণ্য কিনছেন। পেশায় সাংবাদিক, এমন এক ব্যক্তি জানালেন, এখন আর লজ্জা রেখে লাভ নেই। যদিও টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইন দিতে লজ্জা লাগে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, পরিচিত কাউকে দেখলে মুখ লুকাতে হয়; তারপরেও কোনো উপায় নেই। কম মূল্যে পণ্য কেনার জন্য এই কষ্ট করতেই হচ্ছে।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।