দেশের কয়েক কোটি মানুষের নতুন করে জন্মনিবন্ধন করতে হবে। কারন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, তাদের আগের নিবন্ধন গায়েব হয়ে গেছে।
আগে জন্ম নিবন্ধন করে সনদ নিয়েছেন এমন কোটি মানুষের জন্মনিবন্ধন অনলাইনে আপডেট করা হয়নি এবং এখন নতুন সার্ভারে আর পুরনো তথ্য স্থানান্তর করা সম্ভব হবে না।
পাশাপাশি স্কুল শিক্ষার্থীদের একটি বিরাট অংশের একাধিক অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের ঘটনা সামলাতেও হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এখন প্রায় চার কোটি স্কুল শিক্ষার্থীর জন্য ডিজিটাল ইউনিক আইডি তৈরির কাজ চলছে যার জন্য জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
নতুন নিয়মে শিক্ষার্থীদের জন্মসনদের আবেদন করতে হলে তাদের বাবা মায়েরও তাদের জন্মসনদ দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বহু অভিভাবকের আগে নেয়া জন্মসনদ এখন আর সরকারি সার্ভারে প্রদর্শন করছে না।
কর্তৃপক্ষ বলছে আগে যারা ম্যানুয়ালি জন্মসনদ নিয়েছেন তাদের মধ্যে যারা নিজ উদ্যোগে বা সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন অফিস থেকে অনলাইনে এন্ট্রি করেননি তাদের জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য সার্ভারে আর নেই।
তাদের এখন সম্পূর্ণ নতুন করে আবেদন করে জন্ম নিবন্ধন নিতে হবে বলেছেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন মোবারক।
বাংলাদেশের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের উপ রেজিস্ট্রার জেনারেল মির্জা তারিক হিকমত বলেন, আগে যারা ম্যানুয়ালি জন্মসনদ নিয়েছে তাদের তথ্যাদি অনলাইনে আপডেট করার জন্য ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় ছিল। এগুলো নিবন্ধন অফিসগুলোরই করার কথা। ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেকটা হয়েছেও। কিন্তু পৌর এলাকাগুলোতে এটি হয়েছে খুব কম। যে কারণে বহু মানুষের তথ্য এখন আর অনলাইনে নেই। এখন আবার নতুন সার্ভারে পুরনো তথ্য স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। ফলে যাদেরটা বাদ পড়েছে তাদের নতুন করে জন্ম নিবন্ধন করাতে হবে।
তবে এটি সংখ্যায় কত সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
সরকার ২০০৪ সালে জন্ম নিবন্ধন বিষয় আইন করে, যা ২০০৬ সাল থেকে কার্যকর হয়। এই আইনের আওতায় জাতি–ধর্ম–বর্ণ–গোষ্ঠী–লিঙ্গ নির্বিশেষে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে সবাইকে জন্ম নিবন্ধনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া মৃত্যুরও ৪৫ দিনের মধ্যে ওয়ারিশদের মৃত্যু সনদ সংগ্রহের আহ্বান জানানো হয়।
এরপরই ১৮টি কাজের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন মোবারক বলেন, ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় পনের লাখ সনদের তথ্য আপলোড হয়েছে। তবে অনেকের তথ্যই আপলোড হয়নি বলে তাদের এখন নতুন করে নিবন্ধন করাতে হবে।
২০১৩ সালে সরকার আইন সংশোধন করে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়কে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্ব দেয়, যা ২০১৬ সাল থেকে কাজ শুরু করে। এর মধ্যে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জন্ম–মৃত্যু নিবন্ধনের নতুন ওয়েবসাইট ও সার্ভার চালু করা হয়, যা ২০১২ সালে কার্যক্রম শুরু করে।
এ সময় গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুরোনো নিবন্ধিতদের জন্মনিবন্ধন সনদ নতুন ওয়েবসাইটে যুক্ত করে নেওয়ার কথা বলা হলেও তা বেশিরভাগ মানুষের অগোচরেই থেকে যায়।
কর্মকর্তারা বলেন, ২০১১ সালের পর থেকে সব জন্ম নিবন্ধন অনলাইনেই হচ্ছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের তথ্যগুলো অনলাইনে আপলোড করার সুযোগ ছিল। এরপর নতুন সার্ভার আসে কিন্তু সেটিতে আর পুরনো তথ্য আপলোড করার সুযোগ না থাকায় ২০১১ সালের আগে করা বহু নিবন্ধন স্বয়ংক্রিয়ভাবে গায়েব হয়ে যায়। অর্থাৎ সেগুলো অনলাইনেই কখনো আসেনি।
সম্প্রতি বাংলাদেশে স্কুলে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধন সনদ দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবার পঞ্চম শ্রেণীতে পিএসসি পরীক্ষার সময়েও জন্ম সনদ দিতে হয়।
রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস বলছে সরকার দেশের প্রায় চার কোটি স্কুল শিক্ষার্থীর জন্য একটি ইউনিক আইডি খোলার কাজ শুরু করেছে। এটি করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীর স্কুলে ভর্তি আর পিএসসির সময়ে দেয়া জন্ম সনদের মিল নেই। অর্থাৎ তাদের নামে দুটি করে সনদ নিয়েছেন তাদের অভিভাবকরা।
আবার শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার জন্য সুরক্ষা অ্যাপে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্যও জন্মসনদ বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেখানে জন্মসনদ দিতে গিয়ে অনেক অভিভাবক দেখছেন যে ২০১১ সালের আগে নেয়া জন্মসনদ জাতীয় সার্ভারে নেই।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন মোবারক বলেন, ২০১০ সাল পর্যন্ত বহু মানুষের জন্মসনদের তথ্য অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে তবে অনেকেরটাই শেষ করা যায়নি। তবে এখনকার সার্ভারে পুরনোটা আর দেয়া যাবে না। তাই যাদেরগুলো বাদ পড়েছে তাদের নতুন করেই করতে হবে।
এদিকে ২০০১ সালের ১লা জানুয়ারির পর যাদের জন্ম তাদের জন্ম নিবন্ধন করতে হলে শিশুর জন্মের প্রমাণপত্র বা টিকার কার্ড লাগবে। সঙ্গে বাবা–মায়ের জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে।
ফলে নবজাতকদের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে শহর এলাকাগুলো থেকে এখন অনেক বাবা মাকে ছুটতে হচ্ছে গ্রামে বা পৌরসভায় নিজের এলাকায়। সেখানে গিয়ে অনেকে দেখছেন যে তার তথ্যও অনলাইনে এন্ট্রি করা হয়নি।
ফলে প্রথমে নিজের জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে এন্ট্রি করে তার কপি নিয়ে আসতে হচ্ছে শহরে নিজ সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের আবেদনের জন্য।
কর্মকর্তাদের ধারণা সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৫ কোটি জন্মনিবন্ধন একেবারেই গায়েব হয়ে গেছে।
সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।