ঝালকাঠিতে লঞ্চে আগুনের ঘটনায় দগ্ধ একজন ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিউটে মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তির নাম হাবিব খান। এ নিয়ে এই ঘটনায় প্রাণহানি দাঁড়ালো ৪২ জনে। গুরুতর দগ্ধ আরো কয়েকজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বার্ন ইনস্টিটিউটে। ভর্তি সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
আড়াইশ কিলোমিটার দূরের ঝালকাঠির নদীতে লঞ্চে আগুনের ঘটনার আঁচ লেগেছে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটেও। শুক্রবার দুপুরের পর গুরুতর দগ্ধদের আনা হয় এখানে। কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।
দগ্ধ ১৭ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জনকে স্থানান্তর করা হয়েছে আইসিউতে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বাকি ১৫ জন সাধারণ বেডে থাকলেও কেউ শঙ্কা মুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এ অবস্থায় সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে কাজ করছে মেডিকল টিম।
এর আগে শুক্রবার রাত পৌনে ১১ টার দিকে হাবিব খান নামের দগ্ধ একজন বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যান।
শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন জানিয়েছেন, লঞ্চে আগুনের ঘটনায় দগ্ধদের সেবা নিশ্চিতে ৭ সদস্যের বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে বরিশাল মেডিকেলে। সেখানে ভর্তি দগ্ধদের অবস্থা বিবেচনা করে হেলিকপ্টার ও সড়ক পথে ঢাকায় আনা হচ্ছে।
এদিকে, এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল বলে জানিয়েছেন বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী। তার দাবি, এরপরও লঞ্চটি মেরামত না করে চালানো হচ্ছিল।
ঝালকাঠিতে ৫ জনের মরদেহ শনাক্ত করতে পেরেছেন স্বজনেরা। বাকি ৩২ জনের মরদেহ নেয়া হয়েছে বরগুনায়। পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব না হলে ডিএনএ পরীক্ষার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এখনো অনেক যাত্রী নিখোঁজ বলে দাবি করেছেন স্বজনরা।
আট বছরের তামিম বরিশাল মেডিকেল থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে পারলেও পথেই হারাতে হয়েছে তার ছয় বছরের বোন মেহরিনকে। বার্ন ইনস্টিটিউটে মা জেসমিন আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে সে। স্বজনের সন্ধানে অনেকে ভিড় করছেন বার্ন ইনস্টিটিউটে। বরিশালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েও ক্ষোভ ঝেড়েছেন কেউ কেউ।
তবে, দগ্ধদের দেখতে এসে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক। বরিশাল মেডিকেলে দগ্ধদের সেবায় আরো গতি আনতে এরইমধ্যে ঢাকা থেকে চিকিৎসক টিম পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন।
হেলিকপ্টার ও সড়ক পথে বরিশাল থেকে আরও দগ্ধ রোগী ঢাকায় আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের লাশকাটা ঘরে মরদেহ। বাইরে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী সেখানকার বাতাস।
স্বজনদের খোঁজে ছুটাছুটি করছেন অনেকেই। এদিকে, লঞ্চটিতে ত্রুটি ছিল, বলছেন বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা।
ঝালকাঠিতে ময়নাতদন্ত হয়েছে ৩৬ জনের। বেশির ভাগ মরদেহ শনাক্তের পর্যায়ে নেই, বলছেন চিকিৎসক।
এদিকে, ঝালকাঠিতে চারজন এবং বরিশাল মেডিকেলে একজনসহ ৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করে পরিবারের হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৩১ জনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে বরগুনায়।
যাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে না, তাদের বরগুনায় দাফন করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।