এই বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪৮ সাংবাদিককে। এ ছাড়া সংবাদ প্রকাশের জের ধরে হয়রানিমূলক ২৪টি মামলার আসামি আরও ৮৯ সাংবাদিক। এ ছাড়াও ১৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির ৬টি মামলা রেকর্ড করেছে আর্টিকেল নাইনটিন।
সোমবার (১ নভেম্বর) সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তি অবসানের আন্তর্জাতিক দিবস-২০২১ উপলক্ষে আর্টিকেল নাইনটিন আয়োজিত ‘সাগর-রুনি হত্যা মামলা: তদন্ত ও বিচার’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনাসভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পরিস্থিতির এবং সাংবাদিক নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরা হয়।
আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সলের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান এবং একাত্তর টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাদিয়া শারমীন।
আর্টিকেল নাইনটিন জানায়, ২০২০ সালে বাংলাদেশে হামলা-মামলা, হয়রানিসহ মতপ্রকাশজনিত অধিকার লঙ্ঘনের ৬৩১টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়। অধিকার লঙ্ঘনের ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বা ৪৫৪টি ঘটনাই আইনি হয়রানির। এসময়ে মতপ্রকাশজনিত কারণে শারীরিক হামলার ১০৩টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়। রাজধানী ঢাকার বাইরে মফস্বল ও গ্রাম এলাকায় মতপ্রকাশজনিত অধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা বেশি। যা মোট ঘটনার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জাতীয় পর্যায়ে এই হার ২২ দশমিক ২২ শতাংশ।
অন্যদিকে, জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়কালে হত্যার শিকার হন একজন সাংবাদিক। অপহৃত হন দু’জন। আঘাত ও লাঞ্ছনার ১৩৭টি ঘটনায় ভুক্তভোগী ২৪১ জন সাংবাদিক। ৫৫টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৫৩ সাংবাদিককে, যাদের মধ্যে ১৬ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কথা বলার বা লেখার নিরাপত্তা থাকলে নিগ্রহের শিকার হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। সংবিধানে এই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি এই নিরাপত্তা পাননি। তাদের হত্যাকাণ্ডের বিচারেরও রাষ্ট্র ব্যর্থ হচ্ছে।’
২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল রাজধানীতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সমাবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আক্রমণের শিকার হন সাংবাদিক নাদিয়া শারমীন। বর্তমানে একাত্তর টেলিভিশনের এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমার ওপর হওয়া হামলার ঘটনারও বিচার হয়নি। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। তবে ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বরের পর আমার সঙ্গে এ বিষয়ে আর কেউ যোগাযোগ করেনি।’
সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার বিচারের জন্য দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেবল পেশাগত কারণে হত্যা, হামলা এবং মামলার শিকার হন সাংবাদিকরাই। তাই সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে অন্যান্য অপরাধের পার্থক্য রয়েছে।’
সভাপতির বক্তব্যে ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘সাগর-রুনি যখন হত্যার শিকার হন, পাশের কক্ষে অবস্থান করা তাদের একমাত্র ছেলে মেঘের বয়স তখন ৫ বছর। সেই মেঘের বয়স এখন ১৪। কিন্তু তদন্তকারীরা এখন পর্যন্ত মামলায় বলার মতো কোনও অগ্রগতি দেখাতে পারেননি। খুন হওয়া সাংবাদিক দম্পতির পরিবার ও সহকর্মীদের মধ্যে এখন বিচার পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।