পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আজ এই অঞ্চলে জলবায়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনতে আসিয়ানের (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন) আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ) সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সমর্থন চেয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশের সার্বভৌম বনভূমির ৬৮০০ একর জমিতে (রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য) বাংলাদেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য রোহিঙ্গাদের বোঝা বহন করার মতো অবস্থায় নেই।
এআরএফের বর্তমান সভাপতি নেগারা ব্রুনাই দারুসসালাম আয়োজিত ‘উই কেয়ার, উই প্রিপেয়ার, উই প্রসপার’ মূলভাবে এর ২৮তম সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাষণে দিচ্ছিলেন।
ড. মোমেন বলেন, ১৯৫১ সালের রিফিউজি কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রোটোকল স্বাক্ষরকারী না হওয়া সত্ত্বেও মানবিক ভিত্তি বিবেচনা করে বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই অঞ্চলের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আসিয়ান নেতাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর জোর দেন।
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশের ভূমিকার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে তিনি টিকা জনকল্যাণমূলক হওয়া দরকার এবং এটির প্রযুক্তি সকল দেশের ভাগ করে নেওয়া উচিত এবং সাশ্রয়ী মূল্যে এটি উৎপাদন করার জন্য বিষয়টি উপলব্ধি করা উচিত।
জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ যেভাবে ভূমিকা পালন করছে ফোরামের মূল্যায়ন করার সময় মোমেন এআরএফ উদ্যোগে বাংলাদেশের অব্যাহত সহায়তার আশ্বাস দেন।
বৈশ্বিক জলবায়ু অগ্রগতির লক্ষ্যে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে নেতৃবৃন্দের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের আহ্বান জানান তিনি। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, পারমাণবিক প্রসার, সাইবার নিরাপত্তাসহ সহযোগিতা ও সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে এবং অন্যান্য আঞ্চলিক বিষয় মোমেন এবং অন্যান্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় হয় ।
এআরএফ সদস্য দেশগুলোসহ অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, সিঙ্গাপুর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সম্মত হয়েছে।
তারা রোহিঙ্গাদের স্বদেশে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিরস্ত্রীকরণকে বাংলাদেশের শান্তিকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ চাওয়া এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সবসময় অস্ত্র প্রতিযোগিতা অস্ত্রবিস্তার থেকে বিরত থাকে।
মোমেন বলেন, ১৯৭৯-১৯৮০ এবং ২০০০-২০০১ দুই মেয়াদে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ বিশেষ করে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টায় সক্রিয় ও দৃশ্যমান ছিল। তিনি এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণের রীতি-নীতি ও চুক্তিসমূহের বিষয়ে আনুগত্যের অঙ্গীকার পুনর্বক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, আসিয়ান হচ্ছে বহুপাক্ষিক আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম যা এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি এবং সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে চায় এবং ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের প্রতি সম্মান রেখে চলার মাধ্যমে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা জোরদার করতে চায়।
এআরএফ ভুক্ত ২৭টি সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রতিনিধিরা আজকের সভায় অংশ নিয়েছেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ব্রুনাইয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো এরিওয়ান পেহিন ইউসুফ।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।