সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে নোয়াখালীর এক ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। মারধরের দুদিন পর সেই ব্যবসায়ী মারা গেছেন।
অভিযুক্ত কাউন্সিলরের নাম মো. আলী ওরফে সাহাব উদ্দিন। তিনি নোয়াখালীর হাতিয়া পৌরসভার কাউন্সিলর। আর ব্যবসায়ীর নাম মো. আবুল কালাম ওরফে বলি কালাম (৫১)।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে কালামের মৃত্যু হয়। এর আগে গত ২৪ জুলাই বেলা ১১টার দিকে চৌমুহনী বাজারে তাকে মারধরের ঘটনা ঘটে। মারধরের পর মামলা করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি বলেও অভিযোগ কালামের পরিবারের। পুলিশ কালামের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্যে মর্গে পাঠিয়েছে।
কালামের বড় ছেলে তানভীর হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হাতিয়া পৌরসভার চৌমুহনী বাজার সংলগ্ন একটি জমি নিয়ে পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহাবের সঙ্গে আমাদের বিরোধ চলছে। এর জেরে গত ১৯ জুলাই দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কাউন্সিলর, তার ছেলে হেমায়েত উল্লাহ (২৬) ও মো. এরশাদ নামে একজন অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরদিন হাতিয়া থানায় আমার বাবা একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।’
‘পরবর্তীতে গত ২৪ জুলাই বেলা ১১টার দিকে চৌমুহনী বাজারে সাহাব কাউন্সিলরের নেতৃত্বে হামলা করে পিটিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় এবং আমার বাবাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনায় হাতিয়া থানায় মামলা করতে গেলেও ওসি আমাদের মামলা নেয়নি। ওসি জানায়, আমাদের মামলা নিতে উপর মহল থেকে নিষেধ করা হয়েছে। উল্টো প্রভাবশালী কাউন্সিলের মিথ্যা মামলা নেয় ওসি। হামলাকারীরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় গত দুই দিন তাদের হুমকিতে বাবা হাসপাতালে চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে যেতে পারেননি। এক পর্যায়ে গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়’, বলেন তিনি।
এ বিষয়ে হাতিয়া পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত ২৪ জুলাই বেলা ১১টার দিকে চৌমুহনী বাজারে কালাম ও তার ছেলের নেতৃত্বে আমার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একইদিন বিকেলে কালাম ও তার ছেলেসহ নয় জনকে আসামি করে হাতিয়া থানায় আমি মামলা দায়ের করি। হামলা করতে এসে কালামের ছেলে নিজের হাতে থাকা লোহার রডে মাথায় আঘাত পায়। আর কালাম আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন।’
হাতিয়া পৌরসভার মেয়র কে এম ওবায়েদ উল্ল্যাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কাউন্সিলর সাহাবের মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে কাউন্সিলর সাহাব আহত হন। পরে সাহাব এ ঘটনায় হাতিয়া থানায় কালামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তার এড়াতে কালাম উপজেলার সাগরিয়া এলাকায় বোনের বাড়িতে পলাতক ছিলেন। সেখানেই গতকাল বিকেলে ব্রেন স্ট্রোক করলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।’
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ব্যবসায়ী কালাম ব্রেন স্ট্রোক করেছেন। তবে, কাউন্সিলরের মারধরে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠায় গতকাল রাতে হাসপাতাল থেকে মরদেহ থানায় এনে রাখা হয়। আজ দুপুরের দিকে ময়নাতদন্তের জন্যে মরদেহ নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’
‘কাউন্সিলরের ওপর হামলার ঘটনায় কালাম ও তার ছেলেসহ নয় জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে, কালামের মামলা না নেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়’, বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
সূত্র: দ্যা ডেইলি স্টার
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।