অনিয়ম করলে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষমা করা হবে না এবং কঠোর শাস্তি পেতে হবে বলে সর্তক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’ উদযাপন এবং ‘জনপ্রশাসন পদক ২০২০ ও ২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে (ভার্চ্যুয়াল) এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এইটুকু বলবো, ভালো যেমন আপনি পুরস্কার পাবেন আবার কেউ যদি খারাপ কিছু করে তাদের কিন্তু ক্ষমা নেই, তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। এই শৃঙ্খলাটা থাকতে হবে। সেটা অবশ্যই আমরা করবো। ’
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের উদ্দেশে সরকার প্রধান আরও বলেন, ‘আপনারা বিভিন্ন মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। মাঠ পর্যায়ে কাজ করলে আপনারা আরও বেশি জানার সুযোগ পান। মানুষের সুবিধা-অসুবিধাগুলো জানতে পারেন। কিভাবে একেকটা এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা যায় সেটা আপনারা সবচেয়ে বেশি অনুধাবন করতে পারেন। আমি আশা করি সেই ভাবেই আপনারা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কিভাবে নেওয়া যায়, কিভাবে মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়া যায় সেদিকে বিশেষ ভাবে দৃষ্টি দেবেন যেন আমরা জাতির স্বপ্ন পূরণ করতে পারি, সেটাই আমরা চাই। ’
১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে যে, তারা শাসক নন, সেবক..’ বঙ্গবন্ধু তার এই চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে। সংবিধানের ২১এর (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। ’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আরেকটি উক্তির কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। তারা জনগণের খাদেম, সেবক, ভাই। তারা জনগণের বাপ, জনগণের ভাই, জনগণের সন্তান। তাদের এই মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘আপনারা তো এই দেশেরই মানুষ। আপনারা তো পাকিস্তান থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। কাজেই এই বাংলাদেশের সব জায়গায়ই তো আপনার আত্মীয়, স্বজন সবাই আছে। কাজেই বাংলাদেশ যত উন্নত হবে আপনার আপনজনরাই তো সুন্দর জীবন পাবেন, ভবিষ্যৎ পাবেন। ’
‘কাজেই সেই কথা চিন্তা করেই দেশের জন্য কাজ করবেন। যাতে আপনাদের পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা বজায় থাকে। নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি যেন দেশের কাজে লাগে সেটাই আমরা চাই। ’
বাজেট বাস্তবায়নে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাজেট যেন ভালোভাবে বাস্তবায়ন হয় এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন মান ঠিক রেখে বাস্তবায়ন করা যায় আর যত্রতত্র যেখানে সেখানে শুধুমাত্র একটা কিছু নির্মাণের জন্য নির্মাণ যেন না হয়। যেটা আদোতে প্রয়োজন দেশের জন্য, মানুষের জন্য সেই রকমই যেন আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পটা হয়, পরিকল্পনাটা হয়। সেভাবে আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল রাখবেন। এটাই আমি চাই। ’
করোনা মহামারি থেকে বাঁচাতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখান থেকে আমাদের যত দ্রুত মুক্ত হওয়া যায়, বাংলাদেশকে মুক্ত করা যায় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। মানুষ যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলে সেই ব্যাপারে তাদের সচেতন করতে হবে। ’
সবাইকে করোনা টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, ‘জনগনকে সুরক্ষিত রাখতে করোনা ভাইরাস মহামারি প্রতিরোধক টিকা ব্যাপকভাবে দিতে হবে এবং ভ্যাকসিন কিনতে যত টাকাই লাগুক না কেন সেটা দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে আমরা বাংলাদেশে ভ্যাকসিন তৈরি করবো যাতে বাংলাদেশের মানুষের কোনো অসুবিধা না হয়। সেটাই আমরা করবো। ’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ১ কোটি ৮৭ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছে। বাংলাদেশের কোনো মানুষ টিকা পাওয়ার যাদের বয়স হয়েছে তারা কেউ বাদ যাবে না। আমাদের ছাত্র শিক্ষক থেকে শুরু করে আমরা সকলের জন্য এই টিকা ক্রয় করতে থাকবো, আনতে থাকবো এবং দিতে থাকবো। সেই ব্যবস্থাটাও আমরা অবশ্যই করবো। ’
এ সময় বেতন বৃদ্ধিসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সুযোগ বৃদ্ধির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।