ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে পুলিশের সক্ষমতা বেড়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা ও অভাবনীয় সাফল্য সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষায়িত বিভিন্ন ইউনিট গঠন এবং ধারাবাহিকভাবে জনবল বৃদ্ধির ফলে পুলিশের কর্মদক্ষতার উন্নয়ন ঘটেছে। নতুন অপরাধ ও কৌশল মোকাবেলায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। জনগণের কল্যাণে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব, ডিএনএ পরীক্ষা, সাইবার ক্রাইম, ফিনান্সিয়াল ক্রাইম, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারী ও শিশু, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক হেল্প ডেস্ক, বিট পুলিশিং, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ সহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। আইজিপি আজ সোমবার রাজশাহীর সারদায় পুলিশের প্রশিক্ষণের পাদপীঠ শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩৮তম বহিরাগত ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন, অভিবাদন গ্রহণ এবং বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মাঝে পদক বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
পুলিশ প্রধান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০২১-২০৪১ বাস্তবায়নের অন্যতম সারথী পুলিশ। মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বপ্রথম দেশের জন্য রক্ত দিয়েছে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় দেশ ও দেশের মানুষের সেবার জন্য এ বাহিনীকে উন্নত ও আধুনিক করে গড়ে তোলা হয়েছে। পুলিশের প্রতি সদয় অনুকম্পা ও পুলিশের ভাল কাজের স্বীকৃতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আইজিপি।
তিনি বলেন, ব্যক্তিস্বার্থ ও মোহের ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে জনমানুষের কল্যাণ ও দেশের ধারাবাহিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পুলিশ সদস্যদের কাজ করতে হবে। জনগণের সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মানসিকতা নিয়ে পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণ না করে প্রতিকূল ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আইজিপি বলেন, দেশের সকল ক্রান্তিলগ্নে পুলিশ অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। করোনা মহামারীকালে পুলিশের আত্মত্যাগ ও অনবদ্য অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাকালে দায়িত্বের বাইরে গিয়েও জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। করোনাক্রান্ত ব্যক্তিকে যখন আত্মীয়-স্বজন ত্যাগ করে চলে গেছে, তখন পুলিশ আত্মীয়ের ন্যায় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এজন্য পুলিশ পেয়েছে সাধারণ মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন, ভূয়সী প্রশংসা।
তিনি বলেন, পুলিশের প্রতি মানুষের এ বিশ্বাস, আস্থা ও সম্মান আমাদেরকে ধরে রাখতে হবে। মানুষের প্রথম ভরসাস্থল হিসেবে কাজ করতে হবে। তিনি জনগণের প্রতি অপেশাদার আচরণ বন্ধ করা, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শণ, বিট পুলিশিং বাস্তবায়ন ও পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ এবং শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ এ পাঁচটি নির্দেশনা মেনে চলার জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, পুলিশের পোশাকের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। সম্মান ও গর্ব নিয়ে চাকরি করতে হবে।
আইজিপি বলেন, পুলিশ সদস্যদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যক। মানবিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে চলতি ব্যাচ থেকে যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে জুডো, কারাতে, বক্সিংসহ বিভিন্ন ধরনের ক্লাব কার্যক্রম।
দীর্ঘ এক বছর কঠোর পরিশ্রম, অনুশীলন ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে দেশ মাতৃকার সেবায় নিজেদেরকে প্রস্তুত করেছেন ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টরগণ এ কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান, মেধা ও পেশাদারিত্বের সর্বোত্তম ব্যাবহারের মাধ্যমে পুলিশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে হবে। জ্ঞানের অনুশীলন, কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা, নৈতিকতা এবং সততার চর্চা করতে হবে, সর্বোপরি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বিভিন্নভাবে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে ক্যাডেট এসআইদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, ‘আপনাদেরকে এই সমাজের আলোর দিশারী হিসেবে কাজ করতে হবে’। আইজিপি বলেন, প্রযুক্তির ভালো-মন্দ উভয় দিকই রয়েছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির অন্ধকার দিক পরিহার করে আলোকিত অংশটুকু কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়াার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান। পেশাদার কাজের মাধ্যমে পুলিশকে জনগণের ভরসার প্রথম স্থল হিসেবে পরিনত করতে নির্দেশ দেন আইজিপি। জাতির পিতার নির্দেশ মতে, জনগণের সত্যিকার সেবক হিসেবে আভির্ভূত হতে সকল পুলিশ সদস্যকে আহবান জানান তিনি।
আইজিপি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী ৩০ লাখ শহিদ, দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোন এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার সাথে শাহাদতবরণকারী তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান। একাত্তরে শাহাদাতবরণকারী পুলিশ একাডেমির বীর সদস্যদের প্রতিও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন আইজিপি।
আইজিপি বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের পদক প্রদান করেন। পদকপ্রাপ্তরা হলেন, শ্রেষ্ঠ ক্যাডেট (পুরুষ) মো. তানভীর আহমদ, শ্রেষ্ঠ ক্যাডেট (নারী) মোছা. নাসরিন সুলতানা জ্যোতি, একাডেমিক মো. কামরুল হাসান, প্যারেডে অলক বিহারী গুণ, পিটি ও বাধা অতিক্রমে মো. আবদুল কাদির খন্দকার, ম্যাসকেট্রিতে মো. নাজমুস সাকিব শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছেন। প্যারেডে ৫৭ জন নারীসহ ১ হাজার ২৩১ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন।
প্যারেড কমান্ডার সহকারি পুলিশ সুপার ইয়াকুব হোসেনের নেতৃত্বে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি কন্টিনজেন্টের সদস্যগণ সুশৃঙ্খল ও দৃষ্টিনন্দন প্যারেড উপহার দেন।
আইজিপি একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এরআগে সকালে তিনি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে একাডেমির প্রিন্সিপ্যাল অতিরিক্ত আইজি খন্দকার গোলাম ফারুক তাঁকে স্বাগত জানান।
আইজিপি একাডেমি চত্বরে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, ব্যারাক ভবন এবং একাডেমি মসজিদের বর্ধিতাংশের উদ্বোধন করেন। তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন এবং তাদের সাথে ফটোসেশনে অংশ নেন। আইজিপি একাডেমি চত্বরে একটি গাছের চারা রোপণ করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা, অতিরিক্ত আইজিগণ, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, রাজশাহী বিভাগ ও জেলায় কর্মরত উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ, প্রশিক্ষণার্থীদের অভিভাবক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।