ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, তার বিরুদ্ধে দুটি মানহানির মামলার আবেদন করেছেন দুই ব্যক্তি। সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এই মানহানির মামলার আবেদন করা হয়। মামলার বাদী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারোয়ার আলম এবং কাজী আনিসুর রহমান।
ঢাকার সিএমএম কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী দুজনের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। মামলাটি আদেশের জন্য রাখা হয়েছে।
বাদী সারোয়ার আলম বলেন, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন গত ৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের সামনে বর্তমান মেয়র তাপসের বিরুদ্ধে যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন তা তাপসের সম্মান ক্ষুণ্ণ করেছে। তার রাজনৈতিক জনপ্রিয়তাকে নস্যাৎ করার উদ্দেশে সাঈদ খোকনের এ বক্তব্য মানহানিকর। যে কারণে তিনি সংক্ষুব্ধ হয়ে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন। সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে বিচারের আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার সকালে রাজধানীর গোপিবাগে স্লুইসগেট ও পাম্প হাউস পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের কাছে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হবে। তাপস বলেন, সাঈদ খোকন মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার বক্তব্য শুনে অবাক হয়েছি। তিনি নিজে চুনোপুঁটি দুর্নীতিবাজ হিসেবে স্বীকার করেছেন। আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যই এটা মানহানিকর হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেব।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে যারা টাকা লেনদেন করেছেন তারা সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন।
সাবেক মেয়র খোকনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছে। পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআই তদন্তও করছে।
শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পরই শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। ডিসেম্বরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদে মাঠে নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। গুড়িয়ে দেয়া হয় ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এবং সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের অন্তত ১৮ শ’ দোকান। ভাঙা হয় বিভিন্ন মার্কেটের বর্ধিতাংশসহ নানা স্থাপনা। এসব অবৈধ দোকান বরাদ্দের সাথে নাম আসে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে এসব দোকান করে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এ নিয়ে সাবেক ও বর্তমান মেয়রের মধ্যে শুরু হয়, বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য। গত শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও কর্মচারীদের নিয়ে এক মানববন্ধনে খোকন বলেন, তাপস মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। সাঈদ খোকন অভিযোগ করে বলেন, তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছেন। এছাড়া শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করছেন।
তিনি আরো বলেন, তাপস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। মেয়র তাপসকে পরামর্শ দিয়ে সাঈদ খোকন বলেন, আমি তাকে বলব, রাঘববোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন করতে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত করুন। তারপর চুনোপুঁটির দিকে দৃষ্টি দিন।
এর জবাবে রোববার এক অনুষ্ঠানে মেয়র তাপস বলেন, আইন মেনেই সিটি করপোরেশনের টাকা মধুমতি ব্যাংকে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রত্যেক বেসরকারি ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করে থাকে, মধুমতি ব্যাংকও আমানত সংগ্রহ করে থাকে। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে আমানত সংগ্রহ করা হয়। এটা আইনবহির্ভূত কিছু না।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।