করোনার পাশাপাশি এবার বার্ড ফ্লু দেখা দিয়েছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। হিমাচলে মুরগি, মাছ, ডিম বিক্রি নিষিদ্ধ হয়েছে।
করোনায় রক্ষা নেই, বার্ড ফ্লু দোসর। ভারতের পাঁচটি জেলায় বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার কথা জানিয়েছে সরকার। সোমবার কেরালায় সর্বশেষ বার্ড ফ্লুয়ের ভাইরাস মিলেছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে মুরগি, হাঁস বিক্রি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সংক্রমণ যাতে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে না পড়ে সে দিকে নজর রখছে রাজ্য সরকারগুলি।
গত সপ্তাহে প্রথম বার্ড ফ্লু ধরা পড়ে হিমাচলের পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে। রাজ্য সরকারের হিসেবে প্রায় এক হাজার ৭০০ পাখির মৃত্যু হয়েছে কেবলমাত্র কাংড়া অঞ্চলে। এর পরেই রাজ্যে মাছ, মুরগি এবং হাঁস বিক্রির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শুধু তাই নয়, মুরগির ডিম বিক্রিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মৃত পাখির দেহ পাঠানো হয়েছে বরেলির পশুপালন কেন্দ্রে। সেখানে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করেও প্রতিটি পাখির শরীরে বার্ড ফ্লুয়ের জীবাণু মিলেছে।
বার্ড ফ্লু পাখিদের একধরনের জ্বর৷ কিন্তু এই জ্বরটির জন্য দায়ী এক ধরনের ভাইরাস, যার নাম এইচ৫এন১৷ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হাঁস-মুরগি থেকে ভাইরাসটি মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে৷ ছবিতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে এইচ৫এন১ ভাইরাসকে দেখা যাচ্ছে৷
অন্য দিকে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং হরিয়ানায় হাঁসের শরীরে বার্ড ফ্লুয়ের জীবাণু মিলেছে। প্রতিটি রাজ্যেই হাঁসের মড়ক শুরু হয়েছে। রাজস্থান সরকার হাঁস মালিকদের হাঁস মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। যদিও হাঁস মালিকদের বক্তব্য, আশ্বাস মিললেও সব সময় ক্ষতিপূরণ ঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। মুরগি ব্যবসায়ীরাও সমস্যায় পড়েছেন। করোনার কারণে এমনিতেই ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের অবস্থা ভালো নয়। লকডাউনের পর থেকে ধীরে ধীরে তাঁরা আবার ব্যবসা গোছাতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বার্ড ফ্লু শুরু হওয়ায় তাঁদের মাথায় হাত পড়েছে।
হিমাচলের হাঁস ব্যবসায়ী রীতেশ গর্গ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ”করোনার সময় প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছিল। ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে ভেবেছিলাম। অক্টোবর থেকে ধীরে ধীরে আবার ব্যবসা বাড়ছিল। এখন যদি সমস্ত হাঁস মেরে ফেলতে হয়, তা হলে অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হবে।” গর্গের ফার্মে ১০টি হাঁসের মৃত্যু হয়েছে। মড়কের ভয়ে তাঁকে হাঁস মারতেই হবে।
স্থানীয় বাজারেও বার্ড ফ্লুয়ের প্রভাব পড়েছে। হরিয়ানা থেকে প্রচুর পরিমাণ মুরগি আসে দিল্লিতে। দিল্লির মাংস ব্যবসায়ী মহম্মদ উসমান ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, মানুষ মুরগির মাংস কিনতে ভয় পাচ্ছেন। এ ভাবে চললে মাংসের দাম অনেক কমে যাবে। কেনা দামে বিক্রি করে দিতে হবে মুরগির মাংস।
বার্ড ফ্লুয়ের প্রভাব এখনো মানুষের শরীরে দেখা যায়নি। তবে বছরকয়েক আগে সে ঘটনাও ঘটেছিল। ফলে সরকার আগে থেকেই ব্যবস্থা নিয়ে রাখতে চাইছে। হরিয়ানার এক সরকারি আধিকারিক ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, করোনা নিয়ে এমনিতেই হিমশিম অবস্থা। হাসপাতালগুলিতে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করতে হয়েছে বলে বেডের সংখ্যা কমেছে। বার্ড ফ্লুয়ে আক্রান্ত রোগী আসতে শুরু করলে চিকিৎসা দেওয়াই মুশকিল হবে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।