রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভা’স্কর্য নির্মাণের বি’রুদ্ধে প্রথম বিরো’ধিতাকারী চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আ’ন্দোলন এবার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নিরা’পত্তায় পা’হারা বসিয়েছে। দলটির ছাত্র শাখা ইসলামী ছাত্র আ’ন্দোল’নের প্রচার সম্পাদক কে এম শরীয়তউল্লাহ জানিয়েছেন, বরিশালে বঙ্গবন্ধুর ভা’স্কর্য ও ম্যু’রালে কেউ যেন হা’ম’লা চা’লাতে না পারে, সে জন্য তারা স্বে’চ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়েছেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বুধবার বিকেলে বরিশাল নগর ভবনের সামনে সমাবেশ ও বিজয় শো’ভাযা’ত্রা করে ইসলামী আ’ন্দোলন। এতে দলটির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন। এ সময় জাতির পিতার ভাস্কর্য ও ম্যুরালে পাহারা বসানো হয়।এই দলটির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় হলেও তাদের মূল কেন্দ্র বরিশালেই। সেখানকার চরমোনাই ইউনিয়নেই তাদের মূল ঘাঁটি। বরিশাল প্রেসক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য রয়েছে।
এটি স্থাপন করা হয়েছে তিন থেকে চার বছর আগে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় জাতির পিতার একটি ম্যুরাল আছে। ২০০৮ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এটি স্থাপন করেন শওকত হোসেন হিরণ। আরেকটি ম্যুরাল আছে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে যেটি উদ্বোধন করা হয়েছে গত নভেম্বরে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে নগরীতে সমাবেশের আয়োজন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো দুষ্কৃতিকারী যাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বা ম্যুরাল এবং মন্দির বা গির্জায় হামলা চালিয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপাতে না পারে সে জন্য আমরা আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দিয়েছি সেই সব স্থানগুলোতে নিরাপত্তার জন্য।
কে এম শরীয়তউল্লাহ জানান, তাদের কর্মসূচি চলার সময় নিরাপত্তার জন্য এসব স্থানে মোট তিনশ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়। সমাবেশ শেষে পীরের অনুসারীরা যখন নগরী ছাড়ার পরে স্বেচ্ছাসেবকরাও ওই সকল প্রতিষ্ঠান এলাকা ছেড়ে এসেছে। দেশে জাতির জনকের অসংখ্য ভাস্কর্য থাকলেও এবার ধোলাইপাড়ে একটি ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অবস্থান ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এটি নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রথমে অবস্থান নেয় ইসলামী আ’ন্দো’লন। এটি নির্মাণ না করার দাবিতে প্রথমে গত ১৩ নভেম্বর ধূপখোলা মাঠে সমাবেশ করে দলটি। ওই সমাবেশে বলা হয়, তারা এক নং সংকেত দিয়েছেন। দাবি মানা না হলে দেয়া হবে ১০ নং সংকেত। পরে একই দাবি জানায় ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক হুমকি দেন, ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তারা আরেকটি ৫ মের পরিস্থিতি তৈরি করবেন। এরপর হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দেন, ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তারা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেবেন। তবে শুরুতে চুপচাপ থাকলেও পরে সরকারপন্থিরা মাঠে নামে।
তাদের পাল্টা কর্মসূচির পর কওমি মা’দ্রাসা’কেন্দ্রিক দল ও সংগঠনের সুর পাল্টে যায়। তাদের বক্তব্য অনেকটা নরম হয়। মামুনুল হক বলেন, তারা ভাস্কর্যের বিরোধী হলেও সরকারের সঙ্গে যু’দ্ধে যাবেন না। এর মধ্যে গত ৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন একটি ভা’স্কর্যে ভাঙ’চুর চালানো হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে স্থানীয় মাদ্রাসা ইবনি মাসউ’দের চার ছাত্র ও শি’ক্ষককে গ্রে’ফতার করা হয়।
এই মাদ্রাসাটি চরমো’নাইয়ের পীরের অনুসারী। আর পুলিশ জানিয়েছে, দুই ছাত্র তাদেরকে জানিয়েছেন ইসলামী আ’ন্দো’লনের নেতা ফয়জুল করীম ও হেফাজত নেতা মামুনুল হকের ওয়াজ শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা ভাস্কর্য ভে’ঙেছেন। যদিও পরে মামুনুল হক ও ইসলামী আ’ন্দো’লন ভাস্কর্য ভা’ঙার নিন্দা জানিয়েছে।
এসব ঘটনায় ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির ফয়জুল করীম, হেফাজত নেতা বাবুনগরী ও মামুনুলের বিরুদ্ধে হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। এই ইস্যুতে সারাদেশে প্রশাসন, পুলিশ এমনকি বিচারকরা একযোগে সারাদেশে সমাবেশ করে জানিয়েছে, জাতির পিতার সম্মান তারা অম্লান রাখবেন।
সরকারের মুখপাত্র তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ হবে না। গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে কওমি মাদ্রাসার একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তারা জানিয়েছেন, বৈঠক সফল হয়েছে। পরদিন মন্ত্রী বৈঠকের ফলাফল হিসেবে বলেন, এই ইস্যুতে ধর্মভিত্তিক দলগুলো আর রাজপথে নামবে না। ভাস্কর্য নির্মাণও অব্যাহত থাকবে।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।