প্রায় তিন দশক ধরে চলে আসা বাবরি ধ্বংস মামলায় অভিযুক্ত সকলকেই খালাস দিল ভারতীয় আদালত। বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি, মুরলিমনোহর জোশী, উমা ভারতীর মতো নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে মসজিদ ভাঙার ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ ছিল।
বুধবার লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতে তার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদব জানান, অভিযুক্তদের কারো বিরুদ্ধে উপযুক্ত কোনো প্রমাণ মেলেনি। তাই তাদের বেকসুর খালাস করা হল।
একই সঙ্গে, বাবরি ধ্বংসের ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত নয় বলেও জানিয়ে দেন বিচারক।
বাবরি মসজিদ যখন ভাঙা হয়, তখন কল্যাণ সিং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। আদভানি, জোশী ও উমা ভারতী ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় ছিলেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তারা বাবরি মসজিদ ভাঙার চক্রান্ত করেছিলেন এবং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদের চেষ্টা করেছিলেন। বাবরি মসজিদ ভাঙার পর দাঙ্গায় সারা দেশে প্রায় তিন হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন।
উমা ভারতী ইতোমধ্যে বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডাকে জানিয়ে দিয়েছেন, তাকে জেলে যেতে হলে তিনি জামিনের আবেদন করবেন না।
লখনউয়ের আদালতকক্ষে প্রবল নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিযুক্ত ও তাদের আইনজীবী ছাড়া কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। রায় যাই হোক না কেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী হতে বাধ্য বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় মোট ৪৯ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই মামলায় এখন ৩২ জন অভিযুক্ত রয়েছেন। বিজেপি’র সিনিয়র নেতা এলকে আদভানি, মুরালি মনোহর যোশী, উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং, বিজেপি’র ফায়ার ব্র্যান্ড নেত্রী উমা ভারতী, বিনয় কাটিয়ারসহ মোট ৩২ জন অভিযুক্ত। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ওই মামলার রায় ঘোষণা হবে। অভিযুক্ত সকলকে ৩০ সেপ্টেম্বর বিশেষ সিবিআই আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে।
বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, এলকে আদভানি, মুরলী মনোহর যোশী, কল্যাণ সিং, উমা ভারতী, বিনয় কটিয়ার, সাধ্বী ঋতম্ভরা, মোহন্ত নৃত্য গোপাল দাস, ডাঃ রাম বিলাস বেদান্তি, চম্পত রাই, মোহন্ত ধর্মদাস, সতীশ প্রধান, পবন কুমার পান্ডে, লল্লু সিং, প্রকাশ শর্মা, বিজয় বাহাদুর সিং, সন্তোষ দুবে, গান্ধী যাদব, রামজি গুপ্ত, ব্রজভূষণ শরণ সিং, কমলেশ ত্রিপাঠি, রামচন্দ্র খত্রী, জয় ভগবান গোয়েল, ওম প্রকাশ পান্ডে, অমর নাথ গোয়েল, জয়ভান সিং পোওয়াইয়া, মহারাজ স্বামী সাক্ষী, বিনয় কুমার রাই, নবীন ভাই শুক্লা, আরএন শ্রীবাস্তব, আচার্য ধর্মেন্দ্র দেব, সুধীর কুমার কক্কর এবং ধর্মেন্দ্র সিং গুর্জর।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় কয়েকশ’ বছরের পুরোনো বাবরি মসজিদ প্রকাশ্য দিবালোকে ধ্বংস করেছিল, ‘কর সেবক’ নামধারী উগ্র হিন্দুত্ববাদী ধর্মান্ধরা।
তাদের দাবি, ওই স্থানটি হিন্দুদের ভগবান রামের জন্মস্থান। সম্প্রতি সেই জমিতেই রাম মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এরআগে সুপ্রিম কোর্ট সেখানে রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল। অবশেষে দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছর পরে লক্ষনৌয়ে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা বিশেষ সিবিআই (কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা) আদালতে ওই মামলার রায় দিল আজ।
আনন্দবাজার
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।