একটি সাপ অভিযাত্রীকে গিলে ফেলে। তার পরেই ঘটে এক আশ্চর্য ঘটনা। অজগরের পেটের ভিতর উঠে বসেন ওই অভিযাত্রী।
দক্ষিণ আমেরিকার অরণ্য-অধ্যুষিত এলাকার ঘটনা। এক অভিযাত্রী জঙ্গলের ভিতরে গিয়েছিলেন নিজের গবেষণার স্বার্থে। সঙ্গে ছিলেন তার এক সহযোগী। হঠাৎই একটি গাছের ডাল থেকে নেমে আসে অ্যানাকোন্ডা সাপ। প্রায় ২০ ফুট দীর্ঘ সাপটির দিকে তাকিয়ে প্রায় সম্মোহিতের মতো হয়ে যান অভিযাত্রী। ভয়ে নড়াচড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। সেই সুযোগে আস্তে আস্তে তাকে পেঁচিয়ে ধরে সাপটি। বিশাল হাঁ করে একটু একটু করে গলাধঃকরণ করতে থাকে অভিযাত্রীকে।
তার সঙ্গী তখন ভয়ে দিশেহারা। সঙ্গে বন্দুক ছিল, কিন্তু কোনও কারণে সেই মুহূর্তে তার বন্দুকটিও অকেজো হয়ে যায়। অভিযাত্রীকে গিলে ফেলে সাপটি। কিন্তু তার পরেই ঘটে এক অাশ্চর্য ঘটনা। অজগরের পেটের ভিতর উঠে বসেন ওই অভিযাত্রী। বাইরে থেকে তার সঙ্গী স্পষ্ট বুঝতে পারছিলেন সাপের পেটের ভিতর কী ঘটে চলেছে। অভিযাত্রী উঠে বসতেই তিনি ক্যামেরা বার করে ঘটনাটির একটি ছবি তুলে ফেলেন।
কিন্তু তার বিস্ময়ের তখনও বাকি ছিল। তিনি দেখেন, সাপের পেটের চামড়া আস্তে আস্তে হাঁ হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে সাপের পেট চিরে বাইরে বেরিয়ে আসেন প্রায় সম্পূর্ণ অক্ষত অভিযাত্রী। সাপের পেটের ভিতরে থাকা পাচন রস গা থেকে মুছে ফেলে হেসে অভিযাত্রী তার সঙ্গীকে বলেন, অ্যানাকোন্ডা বা অজগর জাতীয় সাপেরা তাদের শিকারকে চিবোয় না, সরাসরি গিলে ফেলে।
তিনি তাই সাপের পেটের ভিতরেও অক্ষত ছিল। জ্ঞানও হারাননি। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে পকেট থেকে ছুরি বের করে তিনি চিরে ফেলেন সাপের পেটের চামড়া। বাইরে বেরিয়ে আসেন অক্ষত দেহে।
উপরের ছবিটির সঙ্গে এমন একটি কাহিনি বিগত কয়েক বছর ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটে। কোথাও কোথাও আবার সমজাতীয় কিন্তু অন্য ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার কোনও এক দেশে অ্যানাকোন্ডা গিলে ফেলেছে আস্ত এক মদ্যপকে।
কিন্তু সত্যিই কি এমন কিছু ঘটেছে? যদি না-ই ঘটে থাকে, তা হলে উপরের ছবিটির ভিত্তি কী? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই উদ্যোগী হয়েছিলেন নেট-ব্যবহারকারীদের একাংশ। অনুসন্ধানের প্রথম ধাপেই তারা জানতে পারেন, উপরের ছবিটি আদৌ ফোটোশপের কারসাজি নয়। ছবিটা সত্যি। কিন্তু তা হলে প্রকৃত ঘটনাটা কী?
প্রথমেই বলে রাখা ভাল, সর্প-বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যদি কোনও পরিণত বয়স্ক মানুষকে গিলে খেতে হয়, তাহলে সেই অ্যানাকোন্ডাকে অন্তত পক্ষে ১৩ ফুট দীর্ঘ হতে হবে।
অত বড় অ্যানাকোন্ডার দেখা সচরাচর মেলে না। তা ছাড়া অ্যানাকোন্ডার মানুষকে আক্রমণ করার মাত্র দু’টি ঘটনা আজ পর্যন্ত নথিভুক্ত হয়েছে। দুই অসুস্থ অ্যানাকোন্ডাকে উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন দুই প্রাণী বিশেষজ্ঞ। এবং দুই ক্ষেত্রেই দুই দু’জন বিশেষজ্ঞের অল্পবিস্তর আঘাত পাওয়া ছাড়া গুরুতর কিছু ঘটেনি।
কিন্তু তা হলে উপরের ছবিটির ব্যাখ্যা কী? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সত্যিই অ্যানাকোন্ডা মানুষকে আক্রমণ করে কি না, তা হাতে-কলমে পরীক্ষা করে দেখার জন্য অভিযাত্রী পল রোজালি ২০১৪ সালে দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে পাড়ি দেন। তার এই গবেষণা একটি চ্যানেলে অনুষ্ঠান হিসেবে সম্প্রচারিতও হয়।
একটি স্নেক-প্রুফ পোশাক পরে সারা গায়ে শুয়োরের রক্ত মেখে তিনি একটি ২০ ফুট লম্বা অ্যানোকোন্ডার সামনে শুয়ে তাকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করতে থাকেন। প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টার পরে সাপটি তাকে লেজে পেঁচিয়ে ধরে খাওয়ার উদ্যোগ নেয়। সাপটি সত্যিই তাকে আস্ত খেতে পারে কি না, তা জানার আগেই পল টের পান, সাপের লেজের প্যাঁচের চাপে তার বা হাতটি ভেঙে গেছে। যন্ত্রণায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে তিনি চিৎকার করে সহযোগীদের ডাকেন। তারা এসে সাপটির মুখ থেকে উদ্ধার করেন পলকে।
পলের অনুসন্ধান অসমাপ্ত রয়ে যায়, কিন্তু সেই সময়েই ‘১-৮০০ কনট্যাক্টস’ নামের একটি মার্কিন কনট্যাক্ট লেন্স কোম্পানি একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করে। সেই বিজ্ঞাপনেই দেখা গিয়েছিল, একটি সাপ গিলে ফেলেছে একজন আস্ত মানুষকে। আর এক বিশেষজ্ঞ সাপের মুখটি হাঁ করে ধরে তার পেটের ভিতরে থাকা ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।