সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, ওএসপি, এসজিপি, পিএসসি বলেছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুর কোনো ইস্যু নেই, বহির্বিশ্বেরও কোনো চাপ নেই। রাষ্ট্রের সংস্কার শেষে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনে সেনাবাহিনী বর্তমান সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। ট্রমা কাটিয়ে পুলিশ স্বাভাবিক কাজকর্ম যখন শুরু করবে, তখন পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার, রাজশাহী সেনানিবাস পরিদর্শন শে‌ষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

সেনাপ্রধান বলেন, আনসার, র‍্যাব, বিজিবিসহ সবার সঙ্গেই কথা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত হয়ে এসেছে। আমি বলব যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণভাবেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে। পুলিশের ওপর যে ধরনের হামলা হয়েছে তারা একটু ট্রমার মধ্যে আছে। ট্রমাটা কাটিয়ে উঠলে পুলিশ তাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে পারবে। পুলিশ বিভিন্ন থানায় ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। আমরা পুলিশকে প্রটেকশন দিয়ে যাচ্ছি। তারা সম্পূর্ণভাবে যখন কাজকর্ম শুরু করে দেবে, তখন পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তখন আমরা সেনানিবাসে ফেরত যাব। সেই পর্যন্ত আমরা থাকব এবং কাজ করে যাব।

সেনাপ্রধান আরও বলেন, রাষ্ট্রের সংস্কার শেষে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনে সেনাবাহিনী বর্তমান সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। দেশের পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এ জন্য আমরা সবাই কাজ করেছি। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন- এ জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।

সাংবা‌দিক‌দের এক প্রশ্নের জবা‌বে জেনা‌রেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সংখ্যালঘু যে ইস্যুটা আছে, এখা‌নে দেখলাম যে একেবারেই ওরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি রাজশাহী বিভা‌গের আটটা জেলায়। এটা একটা অত্যন্ত ভালো দিক এবং এই যে সুন্দর পরিবেশ, সেটা বজায় রাখতে হবে। আমরা সবাই মিলে কাজ করব এবং দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাব। আমরা সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে যেতে চাই। এই দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব যদি সবাই একসঙ্গে কাজ করি।

এই বিষ‌য়ে তি‌নি আরও বলেন, দেশে মাইনোরিটি ইস্যু নিয়ে কিছু কিছু কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু ২০টি জেলার ৩২টি স্থা‌নে এ রকম মাইনোরিটি রিলেটেড অরাজকতা হয়েছে।এগুলো অবশ্যই কাম্য না। আমরা এ বিষয়টি দেখছি এবং যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই আমরা শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব।

গোপালগ‌ঞ্জে সেনা সদস্যদের ওপর হামলা ও সেনাবা‌হিনীর গা‌ড়িতে আগুন দেওয়া প্রস‌ঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি এখন একদম স্বাভাবিক। তাদের নেতারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে যারা এরকম অপরাধ করেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত হবে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

সেনাপ্রধান বলেন, অরাজক পরিস্থিতির মাধ্যমে আমরা নিজেদেরই ক্ষতি করছি। কোনো প্রতিষ্ঠান বা সুযোগ-সুবিধা যেটি জনগণের পয়সায় তৈরি সেগুলোতে যদি আমরা অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করি সে ক্ষতি তো আমাদেরই। যে দিকটি সবাই খেয়াল রাখব এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে বিরত হব।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের সেনা হেফাজতে নেওয়ার বিষ‌য়ে জানতে চাইলে সেনাপ্রধান সাংবাদিকদের বলেন, অবশ্যই আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের প্রতি যদি কোনো অভিযোগ থাকে, মামলা হয়, তাহলে তারা শাস্তির আওতায় যাবেন। কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইব না যে, বিচারবহির্ভূত কোনো কাজ বা হামলা হোক। তাদের জীবনের যে হুমকি আছে, সেটার জন্য আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তারা যে দলের, ম‌তের বা যে ধর্মেরই হোক, তা‌দের নিরাপত্তা আমরা দেখব।

এ‌দি‌কে মঙ্গলবার সেনাসদরের আইএস‌পিআর থে‌কে পাঠা‌নো এক সংবাদ বিজ্ঞ‌প্তি‌তে জানা‌নো হয়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, ওএসপি, এসজিপি, পিএসসি বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার, রাজশাহী সেনানিবাস পরিদর্শন করেন। পরিদর্শকালে তিনি সেনাসদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। পরবর্তীতে তিনি স্থানীয় অসামরিক প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় করেন।

এসময় উপ‌স্থিত ছি‌লেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি), জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ১১ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার বগুড়া এরিয়া, কমান্ড্যান্ট বিআইআরসি ছাড়াও সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাগণ, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন, ডিআইজি, আরএমপি কমিশনার, স্থানীয় অসামরিক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, আনসার, ফায়ার সার্ভিস ও বিএনসিসি এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।