পুলিশ সদর দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেট্রোপলিটন এলাকার ১১০টি থানার মধ্যে ১০৮টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৫২০টিসহ মোট ৬২৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ১১টি থানার অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস, আসবাবসহ সব সরঞ্জাম ধ্বংস হওয়ায় এসব থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে এই ১১টি থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।
কাজে ফিরেছেন অনেক পুলিশ সদস্য
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়ার পর রাজধানীসহ সারা দেশের বেশির ভাগ থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট করা হয়। দেশের পুলিশিব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে। হামলার শিকার পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে যান। কেউ আশ্রয় নেন পুলিশ লাইনসে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নতুন আইজি শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন। অন্যদিকে রবিবার অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন নিম্নপদস্থ পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিরা।
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, ডিএমপির বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য ইউনিফর্ম পরে কাজে যোগ দিয়েছেন। এ পর্যন্ত ডিএমপির ৪৭টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল ইউনিফর্ম পরে পুলিশ সদর দপ্তরেও কাজে অংশ নেন পুলিশ সদস্যরা।
দুপুরে সদর দপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, অভ্যর্থনাকক্ষে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধান ফটকে তখনো সেনা সদস্য ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা পাহারায় ছিলেন। সদর দপ্তরে বিভিন্ন পদমর্যাদার বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে ইউনিফর্ম পরে দাপ্তরিক কাজ করতে দেখা যায়।
দীর্ঘদিন পদোন্নতিবঞ্চিত অনেকে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) ভবনে ভিড় করেন। গতকাল সদর দপ্তরের ভেতরে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বেশির ভাগ বদলি আতঙ্কে রয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর বলেন, পুলিশ সদস্যরা ইউনিফর্ম পরে কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন।
রাজধানীর শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণিতে অবস্থিত ডিএমপি সদর দপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকসহ ভেতরে পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তারা দাপ্তরিক কাজ করছেন। মিন্টো রোডে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়েও কিছু কর্মব্যস্ততা দেখা যায়। প্রধান ফটকের সামনের মূল সড়কে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান এবং সেনা ও এপিবিএন সদস্যের পাহারা ছিল।
সড়কে ফিরেছে ট্রাফিক পুলিশ
ট্রাফিক পুলিশ সূত্র বলেছে, সারা দেশে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেছেন পুলিশ সদস্যরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ‘একটা ছন্দপতন হওয়ার পর আবার ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন। এই সপ্তাহের মধ্যে সবাই যোগ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সোমবার মিরপুরের ১৫টি, গুলশানের ৯টি ও উত্তরার পাঁচটি স্থানে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে গতকালও সাধারণ ছাত্ররা কাজ করছিল।
অবৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ
সহিংসতার সময় দেশের বেশির ভাগ থানার অস্ত্র লুট হয়। রাজধানীর থানাগুলোতে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র লুট হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী সাত দিনের মধ্যে লুট হওয়া অস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। গতকাল সকালে সিএমএইচ হাসপাতালে আহত আনসার সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। উপদেষ্টা বলেন, আগামী ১৯ আগস্টের মধ্যে অস্ত্র জমা না দিলে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান শুরু হবে। তখন অস্ত্র পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একটি অবৈধ অস্ত্র রাখা ও সরকারি নিষিদ্ধ অস্ত্র রাখা—এই দুটি অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে। আন্তর্জাতিক আদালতেও যাওয়া হতে পারে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ সময় বলেন, ‘আহত আনসার সদস্যদের বক্তব্য শুনে আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে। তারা বলছে, সিভিলিয়ান পোশাকে থাকা লোকের ছোড়া ৭.৬২ রাইফেলের গুলি লেগেছে। বড় তদন্ত দরকার। এরা কারা। কাদের হাতে ৭.৬২ রাইফেল গেল? এটা খুবই উদ্বেগজনক। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশ সদস্যদের হাতে ৭.৬২ রাইফেল আছে সেটা মেনে নিলাম। কিন্তু সিভিল পোশাকে কারা আনসার গেটের মধ্যে গিয়ে গুলি করেছে।
পুলিশের কাজে যাওয়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অনেকে সোমবার কাজে যোগ দিয়েছেন। বাকিরাও আশা করি শিগগিরই যোগ দেবেন। প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।