জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত বৃহস্পতিবার ইসি থেকে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে সব ইউএনও এবং ওসিদের বদলি করা হবে। প্রথম পর্যায়ে যেসব ইউএনওর বর্তমান কর্মস্থলে এক বছরের অধিক চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে, তাদের অন্য জেলায় বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ওসিদের ক্ষেত্রে ৬ মাসের বেশি সময় ধরে এক থানার দায়িত্বে রয়েছেন—এমন ওসিদের বদলির প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। ওই চিঠির অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মহাপুলিশ পরিদর্শককেও (আইজিপি) পাঠানো হয়েছে।
সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে মাঠ প্রশাসনে বদলির রেওয়াজ রয়েছে। একজন কর্মকর্তা এক এলাকায় বেশি দিন থাকলে প্রার্থী বা তার লোকজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, এজন্য এ ধরনের বদলি করা হয়ে থাকে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি)। এর মধ্যে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা .হিসেবে সরাসরি নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন। অর্থাৎ মাঠপর্যায়ে তারাই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় থাকেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকে পুলিশ প্রশাসন।
এর আগে যৌক্তিক কারণ ছাড়া প্রশাসনে রদবদল করা হবে না বলে ইসি থেকে আভাস মিলেছিল। ২২ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘যদি যৌক্তিক কোনো কারণ থাকে যে, কোনো অফিসার নিরপেক্ষ নন, তার আচরণে ও কাজে প্রমাণ হয়েছে, তখন বদলি করব।’ তবে এর এক সপ্তাহ পরই ওসিদের বদলির সিদ্ধান্ত এলো।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘তপশিল ঘোষণার পর প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীন থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কমিশনের কোনো নির্দেশনা থাকলে তা পুলিশ পালন করে থাকে।’
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আসন্ন আতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এলক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বর্তমান কর্মস্থলে এক বছরের অধিক চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে, তাদের অন্য জেলায় বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে হবে।
এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো অন্য এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের নিমিত্তে সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। এলক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মস্থলে ৬ মাসের অধিক চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে, তাদের অন্য জেলায় বা অন্যত্র বদলির প্রস্তাব আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করা প্রয়োজন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে। এসব উপজেলায় প্রশাসনের নির্বাহী প্রধান হিসেবে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন ইউএনওরা। এ ছাড়া সারা দেশে রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন ও রেলওয়ে থানাসহ মোট ৬৩৩টি থানা রয়েছে। প্রতিটি থানায় পরিদর্শক মর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সাধারণত ওসিরা থানায় দুই বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করেন। কোনো কোনো থানায় এর বেশি সময় ধরেও দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। অনেক সময় ওসিদের বদলি করা হলেও একই জেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যেই রাখা হয়। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ওসিদের বদলি বা পদায়নের বিষয়টি দেখভাল করা হয়। রেঞ্জগুলোতে ডিআইজি এবং মেট্রোপলিটনে পুলিশ কমিশনার নিজ নিজ এলাকার থানায় ওসিদের বদলি ও পদায়ন করে থাকেন।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) কামরুল আহসান গতকাল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের চিঠি এখনো আসেনি। পেলে সেই আলোকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
আরপিও অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার এবং এর নিচে যত কর্মকর্তা আছেন, তারা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া বদলি হতে পারে না। তপশিল ঘোষণার পর সরকার চাইলে তাদের বদলি করতে পারে না। নির্বাচন কমিশনের কাছে যদি মনে হয় কোনো বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর আচরণ নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিপক্ষে, তখন নির্বাচন কমিশন সেই কর্মকর্তাকে বদলি করতে পারে। তা ছাড়া সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগের সহায়তা চাইলে তারা দিতে বাধ্য। পাশাপাশি আরপিওতেও বলা আছে, নির্বাচন কমিশন কোনো সংস্থা ও বিভাগের সহায়তা চাইলে তারা দিতে বাধ্য।
কনস্টেবল থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা এখন নির্বাচন কমিশনের অধীন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেখানে দায়িত্বে পাঠাবে, আমরা সেখানেই দায়িত্ব পালন করব।’
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।