জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম বারের মতো ‘দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী’ও নির্ধারণ করে দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দল মনোনীত ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থীদের পাশাপাশি কোন কোন আসনে দলীয় মনোনয়ন-বঞ্চিত কারা কারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন তা দলের কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত করে দেওয়া হবে। তবে দলের বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা দলীয় মনোনয়ন পাননি, তারা কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন না।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে গণভবনে মতবিনিময়কালে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, দলের মনোনয়ন-বঞ্চিতরা কেউ কেউ চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। এক্ষেত্রে দল বাধা দেবে না। দল মনোনীত প্রার্থীরা কেউ যেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে চাপ সৃষ্টি না করেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার চেষ্টা না করেন— সেই ব্যাপারেও সতর্ক করে দেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে দল মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের পর দেখা যায়, দলের বর্তমান এমপিদের মধ্যে ৭২ জন এবার মনোনয়ন পাননি। তাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যেই স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন-বঞ্চিতদের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। এতে কোনো কোনো নির্বাচনি এলাকায় ইতিমধ্যে সংঘাতের ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া দলীয় নেতাদের অনেকে ব্যাপকহারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় দলের শৃঙ্খলা রক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে, দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে দল মনোনীত প্রার্থীরাও দুশ্চিন্তার পাশাপাশি এক ধরনের অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন।
গণমাধ্যমে এ নিয়ে বহুমুখী প্রতিবেদন প্রকাশ-প্রচারের পর বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার বলেছেন, ‘দলের কারা কারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন—তা দল থেকে ঠিক করে দেওয়া হবে। এটা ফ্রি স্টাইল হবে না। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় আছে। এর ভেতরে আমরা পরিবর্তন, সংশোধন করতে পারব। আমাদের কৌশলগত দিক থাকবে।’ দলের সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্যের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা সংযত হতে শুরু করেছেন।
জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে চাওয়া দলীয় নেতারা যেন নৌকা প্রতীক পাওয়া মনোনীত প্রার্থীদের জয়লাভে সমস্যার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়—সেই বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও বাছাই করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারণা, দলের মধ্য থেকে হাজারখানেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। দলের মধ্য থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এরকম জোয়ার সৃষ্টি হলে দলের মনোনীত প্রার্থীদের জিতে আসতে তারা ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়াতে পারেন, এজন্য এবার দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে লাগাম টানার পলিসি নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
প্রতিটি আসনে গড়ে ১১ জন মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এবার আওয়ামী লীগের নমিনেশন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র বলছে, সব প্রার্থীই মোটামুটি প্রভাবশালী ছিলেন। আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিএনপিসহ অনেক দল অংশ না নেওয়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক দেখা দেয়। এবার তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না আওয়ামী লীগ। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চায় দলটি। বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না এলে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও ভোটারদের অংশগ্রহণমূলক করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে খানিকটা নমনীয় থাকবে আওয়ামী লীগ। ভোটকে উৎসবমুখর করে তুলতেই এবার এমন অবস্থান নিয়েছে দলটি।
এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী বাড়তে পারে : এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাড়তে পারে। অনেক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১২৮ জন। ঐ নির্বাচনে তিন জন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। তার আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ১৯৪ জন। এদের মধ্যে বিজয়ী হন তিন জন।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।