এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চতুর্থ গ্রেডের বেতন পাচ্ছেন। দুর্গা রানী সিকদার মূলত একজন প্রধান শিক্ষক, বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও চতুর্থ গ্রেডের বেতনভুক্ত কর্মকর্তা। আব্দুল আজিজ মাউশির উপপরিচালক। তিনি জানান, প্রথমে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এখন চতুর্থ গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। চতুর্থ গ্রেডের বেতনভুক্ত কর্মকর্তা মাউশির পরিচালক শাহেদুল খবীর চৌধুরীও। তাদের মতো প্রধান শিক্ষক, সহকারী পরিচালক, উপপরিচালক ও পরিচালক পদের চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা আরও অসংখ্য রয়েছেন।
শুধু তাই নয়, শিক্ষা ক্যাডারের শীর্ষ পদ মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদও বর্তমানে চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে বেতন পান। বর্তমানে চতুর্থ বেতন গ্রেডে জেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক রয়েছেন ৯৪ জন, যারা মহাপরিচালকের সমান গ্রেডে বেতন পান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা প্রশাসনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে মহাপরিচালক ও প্রধান শিক্ষক যখন একই গ্রেডের কর্মকর্তা হন, তখন এই অবস্থা শিক্ষা ক্যাডারের দৈন্যদশাকেই নির্দেশ করে। মূলত দীর্ঘদিন ধরে ক্যাডারের এই সমস্যা নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পারার কারণেই এই সমস্যা চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়া প্রশাসন ক্যাডারের অসহযোগিতাকেও দায়ী করেছেন কর্মকর্তারা।
মাউশির কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের অন্যান্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকেরা যখন প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা, তখন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চতুর্থ গ্রেড, সেটা অবশ্যই মেনে নেওয়া যায় না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেওয়ান হায়াত ১ নম্বর গ্রেডের বেতনভুক্ত কর্মকর্তা। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান গ্রেড-২ মর্যাদার কর্মকর্তা। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরেও গ্রেড-২ মর্যাদার মহাপরিচালক নিয়োগ পান। এছাড়া তথ্য অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারাও প্রথম গ্রেডের বেতনভুক্ত কর্মকর্তা।
মাউশির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে শিক্ষা ক্যাডারের পদ সোপান প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত চার স্তরের। অধ্যাপকেরা চতুর্থ গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি পেয়ে চাকরিজীবন সমাপ্ত করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকের পদটি প্রথম গ্রেড। অথচ চতুর্থ গ্রেডের অধ্যাপক এই গ্রেডে নিয়োগ পান। মহাপরিচালক পদটি ছাড়া প্রথম গ্রেডের আর কোনো পদ নেই শিক্ষা ক্যাডারদের জন্য। এর আগে সরাসরি দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হতো সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে। ২০১৫ সালে জাতীয় বেতনকাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড না থাকায় এখন সেই সুযোগও নেই। চতুর্থ গ্রেডেই আটকে যান শিক্ষা ক্যাডাররা। তাই পদ সোপান তৈরির জন্য ২০১৯ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
এই প্রস্তাবের পর তৃতীয় গ্রেডের ৯৫টি পদ প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের ৯৫টি কলেজের অধ্যক্ষের পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হয়।
ক্যাডারের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা। কর্মবিরতিও পালন করেন। তাদের দাবি, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদকে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ, অর্জিত ছুটি প্রদান ও ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি বাতিল, শিক্ষা ক্যাডারের তপসিলভুক্ত পদ থেকে অন্য ক্যাডারের লোকদের প্রত্যাহার ও প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করা হয়।
বিসিএস স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ জাফর আলী বলেন, শিক্ষা ক্যাডার অনেক বৈষম্যের শিকার। অধ্যাপক বা মহাপরিচালক হয়েও চতুর্থ গ্রেডে অবসরে যেতে হচ্ছে। এটা লজ্জার ও কষ্টের। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় শিক্ষা ক্যাডারের অনেক দাবিই আটকে আছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, মহাপরিচালক পদে যেতে হলে এসএসবির মাধ্যমে যেতে হবে।
মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, এটা লজ্জার। প্রধান শিক্ষক ও মহাপরিচালক একই গ্রেডে থাকলে কোনো কমান্ড থাকে? প্রধান শিক্ষকেরা তো বলবেন, আপনি ও আমি একই গ্রেডে। তিনি জানান, সাত বছর ধরে এই পদে আছি। কোনো পদোন্নতি বা বেতন বাড়ছে না।
কলেজে তৃতীয় গ্রেডে পদোন্নতির সুযোগ থাকলেও কেন দেওয়া হচ্ছে না—এর জবাবে তিনি প্রশ্ন করেন, তারা তৃতীয় গ্রেড এবং তার সংস্থার প্রধান চতুর্থ গ্রেড—এটা কীভাবে সম্ভব? এতে ক্যাডারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।