আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারবিরোধীরা নির্বাচন আসলে একরকম প্রস্তুতি এবং না আসলেও আরেক রকম প্রস্তুতি রয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও র্যাব ছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসার ভিডিপি এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এক সভায় বাহিনীর পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস দেওয়া হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন কমিশন সচিব আলোচনার বিষয় তুলে ধরে বলেন, হরতালের পর একটি বড় রাজনৈতিক দল হরতাল শেষে সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদন মতে এখন পর্যন্ত কমিশনের কাছে মনে হয়েছে এখন পর্যন্ত পরিবেশ সন্তোষজনক রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের যে প্রতিবেদন—এখন পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনে বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। যেহেতু গতকাল হরতালের পর তিন দিনের অবরোধ দিয়েছে বিএনপি, সে বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছে যাতে আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি না ঘটে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচন কমিশন যদি সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় তবে বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া বিজিবি ১১০০ প্লাটুন এবং আনসারের পক্ষ থেকে ৬ লাখ সদস্য মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে স্ব স্ব বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। সকালে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা এ বৈঠকে ভোটের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ও তপসিল ঘোষণা নিয়ে সম্ভাব্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী হতে পারে সে সম্পর্কে বাহিনী প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চান কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এর পর সবার বক্তব্য শোনা হয়। এ সময় নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের কাছে থাকা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন আলোচকরা। প্রায় সবার বক্তব্যেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও অনুকূলে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তারা বলেন, অতীতের দুটি নির্বাচন এবং আগামী নির্বাচন পরিস্থিতি একরকম নয়। সে সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাহিনীর জনবলও বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নত নানা প্রযুক্তির পাশাপাশি বাহিনীর সক্ষমতাও আগের তুলনায় বেড়েছে। সেজন্য নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। তবে ভোটের আগে বৈধ অস্ত্র জমা এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের পরামর্শ দেন কেউ কেউ। তারা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বৈধ অস্ত্রও জমা নেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হয়নি। এ সময় আবার কেউ কেউ বৈধ অস্ত্র উদ্ধারেরও বিরোধিতা করে বলেন, তাহলে ঐ ব্যক্তির নিরাপত্তার ঘাটতি হতে পারে। সেজন্য বৈধ অস্ত্র উদ্ধার না করে এসব অস্ত্র যাতে প্রদর্শন করা না হয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া উচিত।
বৈঠকে নির্বাচনের দিন সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানোর বিরোধিতা করেন বাহিনীর প্রতিনিধিরা। তাদের দাবি, কেন্দ্রগুলোতে আগেই বিপুলসংখ্যক বাহিনী মোতায়েন থাকবে। সেক্ষেত্রে ভোটের দিন ব্যালট পাঠাতে গেলে কিছু সমস্যা হতে পারে। এ সময় ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোটের দিন ব্যালট পাঠানোর বিষয়টি এখনো আলোচনাধীন। এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ছাড়াও চার কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, আনিছুর রহমান ছাড়াও ইসি সচিব ও কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে মহাপুলিশ পরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের (পিএসও) প্রতিনিধি, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালকের প্রতিনিধিরা এবং বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান, গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (এনএসআই)-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল টি এম জোবায়ের এবং ডিজিএফআইয়ের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, কোন পদ্ধতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়গুলো সভায় আলোচনা করা হয়েছে।