দেশে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। একই সঙ্গে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। বিগত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ১১ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছর মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৪৮ জনে। আর নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৩২৭ জন।

তাতে এ বছরে মোট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৫১১ জনে দাঁড়াল। এ ছাড়া চলতি মাসের ২৭ দিনে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯৭ জনের এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬২ হাজার ৬৭৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এক মাসের কম সময়ের এত মৃত্যু এবং আক্রান্ত বিগত কোনো বছরে হয়নি। এর আগে জুলাই মাসে মৃত্যু হয়েছিল ২০৪ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন।

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, দেশের সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের জন্য ইতিমধ্যে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা সরকারের ব্যয় হয়েছে। তিনি জানান, দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট রোগীর ৭০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর ৩০ শতাংশ বেসরকারিতে। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। দুই ধরনের ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। অনেকের প্লাটিলেট ও আইসিইউ প্রয়োজন হয়। অনেকেই শুধু ওষুধেই সুস্থ হয়। গড়ে রোগী প্রতি ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। সেই হিসেবে চলতি মৌসুমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যয় করেছে সরকার।

রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলায় হয়, দেশে বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৮ হাজার ২৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩ হাজার ৯৪৫ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০০ সালের পর থেকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। এর মধ্যে গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬২ হাজার ৩৮২ জন এবং মোট মারা গিয়েছিল ২৮১ জন। যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এরপরে ২০১৯ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭৯ জনের মৃত্যু হয় এবং ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এটিই ছিল দেশে যেকোনো বছরে সবচেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু এ বছর অর্থাৎ বিগত ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ও আক্রান্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে।

অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৫১১ রোগী। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৫৪ হাজার ৪০৯ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬০ হাজার ১০২ জন।

আর চলতি বছরে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ১ হাজার ৭৬২ জন। এ ছাড়া চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জানুয়ারি মাসে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন, মে মাসে দুজন এবং জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর জানুয়ারি মাসে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১ হাজার ৩৬ জন এবং জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রোববার বিকালে রাজধানীর একটি শেরাটন হোটেলে ‘ডেঙ্গু মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে নারীরা আক্রান্ত কম হলেও মারা যাচ্ছেন বেশি। পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ নারী মারা যান। তারা চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করছেন বলেই তাদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। হয়তো তাদের প্রতি নজর দেওয়া হচ্ছে না। দেশের মোট হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ রোগী ৬৫ শতাংশ। ডেঙ্গুতে মৃত্যু রোগীর ৬৫ শতাংশ নারী আর ৩৫ শতাংশ পুরুষ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মোট রোগীর ঢাকায় অর্ধেক, সারা দেশে বাকিগুলো। ঢাকায় রোগী নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অর্ধেক রোগ কমাতে পারব। এ সময় অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, পরিচালক (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।