দীর্ঘ দিন থেকে চলে আসা ডলার সঙ্কট জেঁকে বসছে। এর ফলে বেশির ভাগ ব্যাংক ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছে না। এর ওপর নতুন করে সঙ্কট দেখা দিয়েছে আসন্ন রমজান উপলক্ষে পাঁচটি বিশেষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিয়ে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর ও পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডলার সঙ্কটের কারণে অনেক ব্যাংক প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে পারছে না। এমনি পরিস্থিতি ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারি হেডদের নিয়ে গতকাল বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বলা হয়েছে, আলোচ্য এসব পণ্যের এলসি খুলতে পদক্ষেপ নিতে হবে। সঙ্কট মেটাতে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সহায়তা করা হবে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ হচ্ছে, আমদানি ব্যয় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। আগে থেকেই পণ্য আমদানির পাওনা বকেয়া রয়েছে। এর সাথে নতুন এলসির পাওনা যুক্ত হয়েছে। সবমিলে চলতি ডলার সরবরাহ দিয়ে তা সমন্বয় করা যাচ্ছে না। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব পণ্য আমদানি করা হয় ওইসব পণ্যের দায় পরিশোধে সরকারি ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিপিসির জ্বালানি তেল, বিসিআইসির সার, খাদ্য অধিদফতরের ভোগ্যপণ্য, বিদ্যুৎ বিভাগের বিদ্যুতের সরঞ্জামাদি আমদানির দায় পরিশোধে সরকারি ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো পড়েছে বেকায়দায়। অনেক ব্যাংক প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাফেদা ও এবিবির সিদ্ধান্ত অমান্য করে বেশি দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। এতে নিয়মের মধ্যে থাকা ব্যাংকগুলো পড়েছে বিপাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর এ সঙ্কট আরো বেড়ে গেছে।
এ দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ইতোমধ্যে রমজানের অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পাঁচটি পণ্যের এলসি খোলার জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংক ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলো আমদানিতে এলসি খুলতে পারছে না। এমনি পরিস্থিতিতে গতকাল ১০ জন বড় ছোলা আমদানিকারকের আমদানি পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে যৌথ বৈঠক করে। বৈঠকে ছোলার সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের ছোলা আমদানির প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ডলার সঙ্কটের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পাঁচ পণ্যের এলসি খোলার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলো এই সঙ্কটের মুহূর্তে কিভাবে ডলার সংস্থান করবে তা বলা হচ্ছে না। এ অবস্থায় গতকালের বৈঠকে ডলার সঙ্কটের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আলোচ্য পণ্যগুলোর এলসি খুলতে বলা হয়। সঙ্কট হলে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।