নাটোরে ছেলে সেজে মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে সমকামিতায় বাধ্য করা ও মৌ নামে এক স্কুল ছাত্রীকে হত্যার অভিযোগে টিকটকার রুপাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার সকালে নাটোর শহরের উপরবাজার এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে সাদিয়ার আক্তার মৌয়ের বাবা উত্তর বড়গাছা এলাকার আব্দুল কুদ্দুস রুপাসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে নাটোর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নাটোর থানায় দায়েরকৃত মামলা ও মৃত সাদিয়ার বাবা আব্দুল কুদ্দুস জানান, নাটোর শহরের উপরবাজার এলাকার রুবেল হোসেনের মেয়ে রুপা বন্ধুদের বাইক আর ক্যামেরা ধার নিয়ে টিকটক ভিডিও নির্মাণ করে নিজেকে রুপস ভাই বলে পরিচয় দিত। নিজেকে নাটোরের টিকটক আপু ভাই বলে জাহির করা ব্যক্তিটি আসলে একজন নারী।
‘রুপা খাতুন নামের এই মেয়েটির কাজই ছিল নিজেকে সুদর্শন পুরুষ দাবি করে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের প্রেমের প্রস্তাব দেয়া। নিজেকে ধনীর সন্তান হিসেবে পরিচয় দিয়ে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিলাসী জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দিত। নিজেকে বাংলাদেশ জুটমিল কর্পোরেশন বিজেএমসি অফিসার হিসেবে পরিচয় দিত। তাতেও রাজি না হলে মেয়েটি নিজের দুই হাত কেটে এবং বিষ খেয়ে একাধিকবার প্রমাণ দিত সে খাঁটি প্রেমিক’।
জানা গেছে, প্রতিদিন শহরের স্কুল ও কলেজ ছুটির সময় সে কয়েকজন বখাটে বন্ধুদের নিয়ে মেয়েদের উত্যক্ত করাই ছিল তার কাজ। প্রতিদিন বিকেলে স্টেডিয়ামে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, উন্মুক্ত স্থানে সিগারেট খাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুই ছিল পুরুষের মত। ২০ বছর বয়সী রুপস বন্ধুদের সঙ্গে মিশে প্রথমে ইয়াবা, গাঁজা সেবন করা শুরু করে। এক পর্যায়ে সমকামিতায় আসক্ত হয়ে পড়ে।
আব্দুল কুদ্দুস জানান, ৫ মাস আগে তার ছেলে সনির সঙ্গে রুপার বোনের বিয়ে দেওয়া হয়। সম্পর্কে বিয়াইন হওয়ার সুযোগে রুপা তার মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী কিশোরী সাদিয়াকে সমকামিতার সম্পর্কে প্রলুব্ধ করে। এক সপ্তাহ আগে সাদিয়াকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তারা জানতে পারে রুপা তার মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে। পরে সাদিয়ার পরিবার বিষয়টি নিয়ে রুপার নামে সদর থানায় জিডি করে। সাদিয়ার সন্ধান পেয়ে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।
‘এরপর গত ১৬ আগস্ট শনিবার রাত তিনটায় বাসা থেকে পালিয়ে যায় সাদিয়া। ১৭ আগস্ট রুপার বাবা রুবেল সাদিয়ার মাকে ফোন করে জানান আপনার মেয়েকে পাওয়া গেছে। আমার বাসায় এসে নিয়ে যান। তাৎক্ষণিক সাদিয়ার মা এবং তিন চাচী রুপাদের বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান রুপার বাবা, মা, দাদি লোহার রড এবং পাইপ দিয়ে সাদিয়াকে পেটাচ্ছে। তারা মেয়েকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে তাদের বাসায় ঢুকতে দেয়া হয়নি’।
‘এক পর্যায়ে রুপা এসে জোর করে সাদিয়ার মুখে গ্যাস বিষাক্ত কিছু ঢুকিয়ে দেয়। নিজেও খায়। এর কিছুক্ষণ পরে সাদিয়ার শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হলে অনেক আকুতি মিনতি করেই সাদিয়াকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে। কিন্তু রুপার পরিবার রাজি হয়নি। পরে অবস্থার অবনতি হলে সাদিয়াকে নিয়ে প্রথমে নাটোর আধুনিক হাসপাতালে নেয়া হয়। নাটোর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাদিয়াকে রামেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকালেই মারা যায় সাদিয়া’।
সাদিয়ার বাবা অভিযোগ করেন, এ বিষয়ে নাটোর থানায় হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। মামলা গ্রহণ ও মেয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে নাটোর থানা পুলিশ একটি হত্যা মামলা রেকর্ড করে।
নাটোর সদর থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল মতিন প্রতিবেদককে জানান, এ ঘটনায় সাদিয়ার বাবা হত্যার অভিযোগ এনে সুফিয়া বেগম রুপাসহ চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় রুপাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা প্রতিবেদককে জানান, রুপাকে গ্রেফতারের পরই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।