ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে আঘাতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত দেশের ১৫ জেলায় অন্তত ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া গাছপালা ফসল ও গবাধিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। সেখানকার সন্দ্বীপ চ্যানেলে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও ঢেউয়ে বালু তোলার ড্রেজার ডুবে আট শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ভোলায় গাছচাপা পড়ে ও পানিতে ডুবে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লায় গাছচাপা পড়ে বাবা, মা ও সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে ঝড়ের সময় মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর ক্যানেলে ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়ে নৌকাডুবিতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে।

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে মিরসরাইয়ে সাগরে থাকা ড্রেজার ডুবে ৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। সোমবার  রাত ৮ টার দিকে নিখোঁজ হওয়ার পর মঙ্গলবার (২৫অক্টোবর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাদের সন্ধান মেলেনি। উপজেলার ১৬ নং সাহেরখালি ইউনিয়নের ০১ নং ওয়ার্ডের ০৩নং বসুন্ধরা এলাকায় বেড়িবাঁধ থেকে ৫০০ ফুট দূরত্বে সাগরের মাঝে রাখাছিলো সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন সৈকত-২। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বালু সরবরাহের কাছ করছিলো। মঙ্গলবার দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম নগর থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ৮ সদস্যের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান শুরু করেছেন। নিঁখোজ শ্রমিকদের লাশের জন্য সাগরপাড়ে অপেক্ষা করছেন স্বজনরা।

ড্রেজারে অবস্থানরত নিহত শ্রমিকরা হলো শাহীন মোল্লা (৩৮), ড্রেজার চালক ইমাম মোল্লা (৩২), মাহমুদ মোল্লা (৩২), আলামিন (২১), তারেক (২৬), আবুল বশর (৪৫) ও আরো অজ্ঞাত দুইজন নিখোঁজ হন। সকলের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার সদরের জৈনকাঠি ইউনিয়নে।

ড্রেজার মেশিন সৈকত-২ এর ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম জানান, ঘটনাস্থলে আরো ৬টি ড্রেজার রাখা ছিল। সতর্কতা সংকেত পেয়ে অপরাপর সকল শ্রমিক নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও সমুদ্রে ঢেউ বেশী থাকায় আমাদের শ্রমিকদের আনার জন্য নৌকা ড্রেজারের কাছে যেতে পারেনি। শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

নিখোঁজ শাহিন মোল্লা ও ইমাম মোল্লার মেঝ ভাই এনায়েত উল্লা বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ৮ টা  থেকে আমার আপন দুই ভাই ও অপর চাচাতো-জেঠাতো ৬ ভাই মোট ৮ জন বালু উত্তোলনের  ড্রেজারে সাগরে আটকে পড়ে। রাতে বিষয়টি শুনার পর তাৎক্ষণিক রওনা দিয়ে সকাল ১০ টা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি উদ্ধার তৎপরতা চোখে পড়েনি দেখে আমরা হতাশ হয়। উদ্ধারকারি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুপুর ২টার দিকে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর ড্রেজার সৈকত-২ মালিক মো. গাফফারকে রাতে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হাসপাতালে তুমি যাও, আমি সকালে আসবো। সকালে এসে তাকে একাধিক বার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

ড্রেজার থেকে বেঁচে ফেরা শ্রমিক মো. সালাম জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও ঢেউ ওঠায় সৈকত-২ নামে তাদের ড্রেজারটি মিরসরাই উপকূলের সন্দ্বীপ চ্যানেলে ডুবে যায়। ড্রেজারটির মালিক সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে নিয়োগ দিয়েছে বেপজা। ড্রেজারটিতে থাকা ৯ শ্রমিকের মধ্যে তিনি কিনারে আসতে পারলেও বাকি ৮ শ্রমিক আটকা পড়েন।

মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কবির হোসেন বলেন, সাগরে ড্রেজার সহ ৮ শ্রমিক নিখোঁজের খবর পেয়ে একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সংশ্লিষ্ট কোস্ট গার্ড কমান্ডার কে বিষয়টি মোবাইলে অবগত করে তাদের কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। পরে ফায়ার সার্ভিসকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারি বলেন, মঙ্গলবার সকাল আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রাম থেকে আসা ৮ সদস্যের একটি ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। দুপুর পাঁচটা পর্যন্ত কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে নিখোঁজ শ্রমিকরা ড্রেজারের ভেতর বালিচাপা পড়ে মারা গেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো মিনহাজুর রহমান বলেন, দুপুর ২টা চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবরী দল উদ্ধার অভিযানে নেমেছে। দুপুরে সাগরে জোয়ার থাকায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হলেও বিকেল থেকে পুনরায় উদ্ধার কাজ চলতেছে।

ভোলা: ভোলায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ভোলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড়ের দমকা হাওয়ায় গাছের চাপায় প্রাণ যায় বিবি খাদিজা (৬৮) নামের এক নারীর। চরফ্যাশন উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ের সময় মোটরসাইকেলে করে দুজন যাওয়ার পথে গাছের ডাল পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. মাইনুদ্দিন (৪৫)। ভোলা সদর উপজেলার চেউয়াখালী গ্রামের মফিজুল ইসলাম (৭০) ঘরচাপায় এবং লালমোহন উপজেলার ফাতেমাবাদ গ্রামের ফরিদুল ইসলামের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (২৫) পানিতে ডুবে মারা যান।

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশের দুই কনস্টেবলসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল আমীন বলেন, জামালপুর সদর উপজেলার নারায়ণপুর তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা দুই আসামীর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পথে প্রচ- ঝড়বৃষ্টির মধ্যে মাইক্রোবাসটি রাত সাড়ে আটটার দিকে গোলাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে দুই পুলিশ সদস্য কনস্টেবল নুরুল ইসলাম ও মো. সোহেল এবং আসামী লালন নিহত হন। একই জেলার বৃষ্টির সময় আইপিএস সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যান টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়া পাঞ্জাপাড়া এলাকার শরীফ ফকির। সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

কুমিল্লা: কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা হেসাখাল গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় সোমবার রাতে ঘরের ওপর গাছ পড়লে এক পরিবারের তিনজন নিহত হন। নিহত তিনজন হলেন নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার ও তাদের চার বছরের মেয়ে নুসরাত আক্তার।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্বমোহন ও শিল্পপার্কের মাঝখানে যমুনা নদীর ক্যানেলে ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়ে নৌকা ডুবিতে মা-ছেলে মারা গেছেন। সোমবার রাত ৯টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। তারা হলেন পূর্বমোহন  গ্রামের খোকনের স্ত্রী আয়েশা খাতুন ও তার ছেলে আরাফাত হোসেন। এণথ্য নিশ্চিত করেন বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন।

নড়াইল: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে সোমবার রাতে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে মারা যান মর্জিনা বেগম (৪০) নামের এক নারী। তার বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার অর্জনবাহার গ্রামে।

বরগুনা: বরগুনা সদর উপজেলার সোনাখালী এলাকায় একটি ঘরের চালে গাছ পড়লে ওই ঘরে থাকা আমেনা খাতুন নামের এক নারী মারা যান। সোনাখালী এলাকার সমাজকর্মী এনামুল হক ওরফে শাহীন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে নিহত আমেনা খাতুনের বয়স ১০০ বছরের বেশি। ওই নারী রাত আটটার দিতে ঘরের ভেতর খাবার খাচ্ছিলেন। ঝড়ের সময় একটি গাছ তার ঘরের ওপর পড়ে। এ সময় চাপা পড়ে তিনি মারা যান।

সিরাজগঞ্জ: প্রবল ঢেউয়ে সিরাজগঞ্জে নৌকাডুবিতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত নয়টার দিকে জেলা সদরের সয়দা ইউনিয়নের মোহনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দুজন হলেন মোহনপুর গ্রামের খোকন হোসেনের স্ত্রী ও শিশুসন্তান। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।

গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গাছচাপায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। দুই নারী হলেন উপজেলার পাঁচকাহনিয়া গ্রামের রেজাউল খার স্ত্রী শারমিন বেগম (২৫) ও বাঁশবাড়ির চরপাড়া গ্রামের হান্নান তালুকদারের স্ত্রী রোমেছা বেগম (৫৮)।

নোয়াখালী: ঝড়ের সময় রান্নাঘরের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা গ্রামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সানজিদ আফ্রিদি নামের শিশুটির বয়স ১১ মাস। সানজিদ ওই গ্রামের বাসিন্দা আইনজীবী মো. আবদুল্লাহর ছেলে।

শরীয়তপুর: শরীয়তপুরে গাছের নিচে চাপা পড়ে সাফিয়া বেগম (৬৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি জেলার জাজিরা উপজেলার সিডারচর এলাকার হালান মুসল্লির স্ত্রী। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সাফিয়ার পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে মৃত্যুটা এড়ানো যেত।

কক্সবাজার: কক্সবাজারের টেকনাফে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মিয়ানমার থেকে টেকনাফ বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা জাহাজ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়লে ডেক থেকে পড়ে শৌমিং (৭১) নামের একজনের মৃত্যু হয়। তিনি মিয়ানমারে নাগরিক। তিনি ওই জাহাজের বাবুর্চি ছিলেন। এ ছাড়া ঝড়ের সময় নিখোঁজ এক শিশুর লাশ পরে টেকনাফ পৌরসভার একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। সোহেনা (৯) নামের শিশুটি টেকনাফ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা জাফর আলমের মেয়ে।

পটুয়াখালী: পটুয়াখালী সদর উপজেলার প্রতাপপুর খেয়াঘাট এলাকায় লোহালিয়া নদীতে ইটবোঝাই ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হন ট্রলারের শ্রমিক নুরুল ইসলাম (৪৫)। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পটুয়াখালী নদী ফায়ার স্টেশনের ডুবুরিরা তার লাশ উদ্ধার করেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ট্রলারটি নোঙর করতে গেলে সেটি ডুবে যায়। ফায়ার স্টেশনের লিডার মজিবুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গাজীপুর: গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ইকুরিয়া গ্রামে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় ঘরচাপায় আনিসুর রহমান (৯) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কাপাসিয়ার ইউএনও এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় মাটির ঘর ধসে গিয়ে পাশের টিনের ঘরকে চাপা দেয়। এতে ওই ঘরে থাকা শিশু আনিসুরের মৃত্যু হয়।

মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তা-বের সময় বসত ঘরে গাছ ভেঙে পড়লে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়। লৌহজং থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়েবীর বলেন, নিহত দুজন হলেন উপজেলার কনকসার এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী আসমা বেগম (২৮) ও তার মেয়ে সুরাইয়া আক্তার (৩)।

সিলেট ব্যুরো: প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের হাজারো মানুষের আকাশযাত্রায় একমাত্র ভরসা সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন হাজারো যাত্রীসাধারণ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট দিয়ে দেশ-বিদেশে যাতায়াত করেন। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে নিয়মিু রুটিনে ছন্দপতন ঘটে গত সোমবার এই বিমানবন্দরের। এ ছাড়া জরুরি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় বিমানবন্দরটিকে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে ৮টি ফ্লাইট অবতরণ করা হয়। তবে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট উড্ডয়ন বন্ধ হয়ে যায়। সবমিলিয়ে তিনটি ফ্লাইটের নিয়মিত উড্ডয়ন বাতিল করা হয়।

তবে ফ্লাইট উড্ডয়ন বন্ধ থাকলেও অবতরণ বন্ধ রাখা সম্ভব হয়নি। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরগুলোর পরিস্থিতি ওসমানী বিমানবন্দরের চেয়ে বিপজ্জনক ছিল। ফলে বিশ্বের বিভিন্নস্থান থেকে আসা ফ্লাইটগুলো সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে এসে জরুরি অবতরণ করে।

জরুরি অবতরণ করা ফ্লাইটের সংখ্যা ৮টি। তন্মধ্যে একটি ফ্লাইট আসে সৈয়দপুর থেকে, বাকিগুলো ছিলো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সহকারী স্টেশন ম্যানেজার সৈয়দ বেলায়েত আলী লিমন জানান, তাদের পাঁচটি ফ্লাইট ওসমানী বিমানবন্দরে এসে জরুরি অবতরণ করে। তন্মধ্যে চারটি ফ্লাইট আসে চেন্নাই, কলকাতা, দুবাই ও সিঙ্গাপুর থেকে। আরেকটি ফ্লাইট ছিল অভ্যন্তরীণ।

তিনি বলেন, ‘এয়ারলাইন্সে আমার ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে একসাথে এতো ফ্লাইট ডাইভার্ট হয়ে ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণ করতে দেখিনি।’তিনি জানান, তাদের ফ্লাইটের যাত্রীদের এয়ারলাইন্সের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।

অন্য এয়ারলাইন্সগুলোও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাত্রীদের জন্য হোটেল ও খাবারের ব্যবস্থা করে।

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ গতকাল মঙ্গলবার সকালে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তিনটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। তবে জরুরি অবতরণের জন্য আসা আটটি ফ্লাইট ওসমানীতে অবতরণ করে। তন্মধ্যে সাতটি ফ্লাইট ছিল আন্তর্জাতিক।

মাদারিপুর : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংএর আঘাতে রাজৈর উপজেলায় বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। অনে গাছ উপড়ে পড়ে। ঝড় ও অতি বর্ষণে শীতকালীন শাক সবজির ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। বাজারের দোকানগুলোতে পানি ঢুকে দোকানের মালামালের ক্ষতি হয়েছে।

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে রাতভর বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার কারণে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে চলতি মৌসুমের আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষক। আগাম জাতের কিছু ধান পাকতে শুরু করেছে, বাকি ধানের সবে মাত্র শীষ বেড় হয়েছে। কৃষকের অতি কষ্টের ফসল বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় মাটির সাথে নুয়ে পড়েছে। বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় উপজেলার দশ ইউনিয়নের কমপক্ষে শতাধিক একর জমির আমন ধানগাছ বাতাসে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে কিছু জমিতে পানিও জমে যায়। মাটিতে শুয়ে পড়া ধানের শীষ পঁচনের হাত থেকে বাঁচাতে তিন-চার গোছা ধান গাছ একত্র করে ঝুঁটির মতো করে বেঁধে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন কৃষকরা।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে দেশের ৪১৯টি উপজেলার ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও ১ হাজার মৎস্য ঘেরের। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র জানতে আরও ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ঘরের ওপর গাছ পড়ে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জে দুইজনকে এ সহায়তা দেয়া হয়েছে। ঝড়ে ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য টিন ও নগদ অর্থ দেয়া হবে। বুধবার থেকে এ সহায়তা দেয়া শুরু হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের সুদহীন ঋণ দেয়া হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৭ হাজার আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ লাখ মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় শেষে মধ্যরাত থেকে মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। সকালের মধ্যে সবাই আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন।