গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেই মৃত্যুবরণ, অজামিনযোগ্য ধারা, ছোট অপরাধে বড় দণ্ড, একই বিষয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা, পত্রিকাগুলোতে হচ্ছে না অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। আইন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে সুরক্ষা দেয়া, এখন সেই আইনই যদি জনগণের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, তাহলে সেটি আর জনগণকে সুরক্ষা দিতে পারে না। ২০১৮ সালে প্রণয়ন করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় এমন সব ঘটনা, আইনটির অপপ্রয়োগ ও এতে নানা অসামঞ্জস্য রয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীতে ঢাকা আর্ট গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিতর্ক’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয় ২০১৮ সালে। এরপর আমি দেখেছি এর কিছু-কিছু অপপ্রয়োগ হয়েছে বা হচ্ছে। সবাই তো স্বীকার করে না।
কিন্তু, এখন এই অপপ্রয়োগ অনেকাংশে কমে এসেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাক স্বাধীনতা বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য হয়নি। এটি জনস্বার্থেই হয়েছে।
সাংবাদিকদের টার্গেট করে এ আইন হয়নি। যদি এমন হয়- আপনাকে অপরাধের ভিত্তিতে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেক্ষেত্রে এই আইন জরুরি।
কার্টুনিস্ট কিশোরকে পুলিশি হেফাজতে ৩০০ দিন আটক রাখা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, যেকোনো আইন ইমপ্লিমেন্টের সময় কিছু অপব্যবহার হয়। আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। আরেকটা বিষয় হচ্ছে অজামিনযোগ্য মানে এই নয় যে, সে কোনোদিন জামিন পাবে না। বিজ্ঞ আদালত বিবেচনা করবেন তাকে জামিন দেবেন কি দেবেন না। আপনাদের এই আইন ভীতি দূর করার জন্য কী কী করা দরকার, আমরা আপনাদের সঙ্গে বসে করব। ডেটা প্রটেকশন আইন নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এডিটরস গিল্ডের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বৈঠকে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, এ আইনের চার বছর হয়ে গেল। দুই বছর আগে এই আইনে আটক সাংবাদিক মুশতাকের মৃত্যু হয়। বন্ধ হয়ে গেছে কার্টুন। পত্রিকাগুলোতে প্রায় উঠে গেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। উপাত্ত সংরক্ষণ আইন- এটি মানুষের ক্ষতি করবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এমন কথা বলছে। আলোচনায় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আমি যদি নাটকে এমন কিছু দেখাই, মুচির চরিত্র, পুলিশের চরিত্র। যদি পুলিশের চরিত্র একটু নেগেটিভভাবে তুলে ধরি, মামলা দিয়ে দিচ্ছে।
সাংবাদিক-কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেন, আইনের একটা উদ্দেশ্য থাকে, সেটা হচ্ছে জনগণকে সুরক্ষা করা। এখন সেই আইন যদি জনগণের স্বাধীনতা বন্ধ করতে চায়, তাহলে সেই আইন আর জনগণকে সুরক্ষা দিতে পারে না। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই আইন ব্যবহৃত হয়। বলা হয়েছিল, জনগণ কিংবা গণমাধ্যমকে হয়রানির জন্য এই আইন ব্যবহার করা হবে না। কিন্তু আমরা এর উল্টোটা দেখছি। চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমাদ সায়মান বলেন, সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে এই আইন অনুসরণ করা যাবে না। তার মানে, সাধারণ লোকজনকে এই আইনে জড়ানো যাবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমার আপত্তি আছে।
আর্টিকেল-১৯ এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, এই আইন অনুযায়ী সাংবাদিকদের আটকের জন্য সরকারের অনুমতি লাগে না, জামিন অযোগ্য এরকম অনেক ধারা আছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে এরকম আইন করা হয়। এখন আবার নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনটি আইনের কথা বলা হচ্ছে। উপাত্ত সংরক্ষণ আইন নামে একটা আইন করা হচ্ছে। এর মধ্যে সরকার সব লোকের ডাটা পাবে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি জেড আই খান পান্না বলেন, এই আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।
দৈনিক সময়ের সংবাদ.কম প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।