বিএনপি লাশ ফেলে সরকারবিরোধী আন্দোলন জমাতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন জমাতে উসকানি দিয়ে লাশ ফেলতে চায়। সরকার বিএনপির এ ফাঁদে পা দেবে না।
শনিবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি বুকে হাত দিয়ে বলব, পাঁচ বছর আগে ছিলাম প্রতিমন্ত্রী। এবার ১১ বছর হয়ে গেল। কোনো পার্সেন্টেজ কোনো কমিশন কখনো নিইনি। সরকারের টাকা জনগণের ট্যাক্সের টাকা, এই টাকা যায় কোথায়?
২০১৭ সাল হতে প্রতিবছর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর ৬ষ্ঠ বারের মতো জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। এ বছর মূল প্রতিপাদ্য ‘আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি’ স্লোগানকে সামনে নিয়ে দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করছে সংশ্লিষ্টরা।
মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি ছোট ছোট পরিবহন চলাচলসহ রাস্তা নির্মাণ করার পর দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
বাংলাদেশে জাপানি অর্থায়নে তিনটি সেতু নির্মাণের ব্যয়ে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়ে করা হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা গল্প নয় সত্য। সেভ হয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে এটাও হয়, চুরিচামারিও আছে; চুরিচামারি তো এটা চলতেই থাকবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এদেশে কিছু লোক আছে আমি জানি না কত টাকা তাদের দরকার? তাদের আর কত অর্থ? কত সম্পদের দরকার? সাধারণ মানুষ কেমন আছে এটা তাদেরকে বিড়ম্বিত করে না। এরা যদি নেতা হয় এই নেতার কোন দরকার নেই বাংলাদেশে। শেখ হাসিনার মতো সৎ নেতা চাই। শেখ হাসিনার মতো ভালো মানুষ এ দেশের রাজনীতিতে ৭৫ পরবর্তীকালে আর একজনও আসেনি। এটা হল সত্য কথা।’
‘কিন্তু আমরা যারা তার সঙ্গে রাজনীতি করি আমরা কয়জন তাকে মেনে চলি? কয়জন জনপ্রতিনিধি জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন করেন? আর কয়জন পকেটের উন্নয়ন করেন তার হিসাব দিতে হবে সবাইকে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা একা সৎ থাকবেন, দিনরাত পরিশ্রম করবেন আর আমরা টাকার পেছনে, নিজের ভাগ্য উন্নয়নে, পকেটের উন্নয়নে আমরা ব্যস্ত থাকি এটা হয় না? রাস্তায় তিন চাকার গাড়ি বন্ধ করেছি, আমি যখন খবর নিই, তখন বলে যে অমুক জনপ্রতিনিধি তিনি বলেছেন এখানে গাড়ি চলবে। কেন চলবে ওনার কোন স্বার্থ আছে? কেন চলবে সামনে ভোট আছে? জীবন আগে না জীবিকা আগে? জীবনকে তো বাঁচাতে হবে? জীবন না থাকলে জীবিকা দিয়ে কি হবে?’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বুকে হাত দিয়ে বলব, পাঁচ বছর আগে ছিলাম প্রতিমন্ত্রী এবার ১১ বছর হয়ে গেল। কোনো পার্সেন্টেজ কোনো কমিশন কখনো নেইনি, বুকে হাত দিয়ে বলছি। কিন্তু কারা আমার সঙ্গে কাজ করে? রাস্তা করি এক পশলা বৃষ্টি হলে রাস্তা নাই? এ রাস্তা করে কি লাভ? এই টাকা কোথায় যায়? সরকারের টাকা জনগণের ট্যাক্সের টাকা, এই টাকা যায় কোথায়?’
‘ আমি আবারও বলছি সেক্রেটারি সাহেব কোথায় কি হয় আমার জানার দরকার নেই? দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিবেন না। এই মন্ত্রণালয়ের কোথাও দুর্নীতিবাজ থাকতে পারবে না। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করুক, কেন তদন্ত করে না? যেখানে দুর্নীতি হয়, সেখানে তদন্ত করতে হবে।’
মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সবার উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কাজ করুন দুর্ঘটনা কমান যানজট কমান রাস্তার শৃঙ্খলা আনুন; এই লক্ষ্যে কাজ করুন। এটাই আজকের প্রত্যাশা। কিন্তু আগামী বছর গিয়ে দেখবো প্রত্যাশার ধারে কাছেও নাই। তাহলে দিবস পালন করে কি লাভ? সড়কটা নিরাপদ সারা বছর জন্য রাখতে হবে, একদিন না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনি রাজনীতি করেন মানুষের জন্য। মানুষের অসুবিধা করে রং সাইডে যাবেন, আপনি কি নেতা? কি রাজনীতিবিদ? পুলিশকে বাধ্য করেন আপনাকে রং সাইডে যেতে? তিন চাকার গাড়ি আইন করে, ২২ সড়কে বন্ধ করেছি কিন্তু কে শোনে কার কথা।’
সড়কে ছোট পরিবহন চলার বিষয়ে নীতিমালা করে তার বাস্তবায়ন করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট পরিবহনে অনেক গরিব মানুষ জীবন-জীবিকা করে খায়। তাই এখানে আমাদের নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। নীতিমালা করতে হবে এবং নীতিমালার বাস্তবায়ন করতে হবে। সে লক্ষ্যে এই কাজগুলো এখন থেকে করতে হবে।’
সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা আগের চেয়ে কমলেও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার আগের চেয়ে বাড়ছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা হলো বাস্তবতা। অস্বীকার করে লাভ কি? এসব ব্যাপারে আমরা কেউ দায় এড়াতে পারবো না। দায়িত্বে আমি আছি যতক্ষণ, দায়িত্ব আমাদের পালন করতেই হবে।’
অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে মন্ত্রী বলেন, ‘তারপরও শৃঙ্খলা কেন নেই? শৃঙ্খলা না থাকলে সাফল্য ম্লান হয়ে যাবে। উন্নয়নের অবকাঠামোর কত যে সাফল্য, এটা ম্লান হয়ে যাবে। যদি আমরা পরিবহনে, সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে না পারি। এগুলোর এখনোই নিয়ম করতে হবে।’
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শাজাহান খানসহ অনেকে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।